ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

জুলাই মাসে রপ্তানি বেড়েছে ২৪.৯০ শতাংশ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ০২:২৫ এএম

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, যা মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে অর্জিত হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সোমবারের (৪ আগস্ট) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে রপ্তানি ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৫ সালের জুলাই মাসে বেশির ভাগ পণ্যের রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি হয়েছে ১৩৩.৪৯ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১১০.৫৬ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০.৭১ শতাংশ বেশি।


চিংড়ি রপ্তানি আয় ৩১ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ২১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৪৭.৬২ শতাংশ বেশি। কৃষিপণ্য রপ্তানি ৯০.৫০ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ৮০.১৯ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১২.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওষুধ খাতের রপ্তানি ১৯ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের ১২ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৫৮.৩৩ শতাংশ বেশি। প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি ২১.১৬ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ১৯.৭০ মিলিয়নের তুলনায় ৭.৪১ শতাংশ বেশি। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১২৭ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের ৯৮ মিলিয়নের তুলনায় ২৯.৫৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ৩৮ মিলিয়ন ডলার (আগের বছরের ২৭ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৪০.৭৪% বেশি), ক্রাশড লেদার ৯.২৪ মিলিয়ন ডলার (৭.৫৮ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২১.৯৩% বেশি) এবং চামড়ার জুতা ৮০ মিলিয়ন ডলার (৬৪ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৫% বেশি)।


পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ৫৫.৪৪ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ৫২.৮৪ মিলিয়নের তুলনায় ৪.৯১ শতাংশ বেশি। বিশেষায়িত টেক্সটাইল রপ্তানি ৩০ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের ২৭ মিলিয়নের তুলনায় ১১.১১ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি ৬৮ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ৬০ মিলিয়নের তুলনায় ১৩.৩৩ শতাংশ বেশি। নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানি ৫১ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের ৩৬ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৪১.৬৭ শতাংশ বেশি।


বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম ইহসান বলেন, এ বছরের জুলাই মাসের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হলেও এর পেছনে একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। গত বছর অভ্যুত্থান পরিস্থিতির কারণে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল, বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল এবং গড়ে ১০-১৫ দিন কারখানা বন্ধ ছিল। এসব কারণে গত বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়েছিল, যার প্রভাব এ বছরের প্রবৃদ্ধিতে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ট্যারিফ ইস্যুর কারণে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আইসিডিতে পণ্য পাঠানোর একটি বাধ্যবাধকতা ছিল। ফলে রপ্তানিকারকরা দ্রুত শিপমেন্ট সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন, যা রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অতিরিক্ত প্রভাব ফেলেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশ অর্থনীতি ও রপ্তানিকারকদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুল্কহার কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে, তারপরও আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে যাতে বৈশ্বিক বাজার থেকে বেশি শেয়ার দখল করা যায়। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে সরকারকে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বন্দর ও কাস্টমসের দক্ষতা বাড়াতে হবে, যাতে পণ্য সরবরাহের সময় বা ‘লিড টাইম’ কমানো যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, নতুন শুল্কহার বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে। চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে অনেক ব্যবসা বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হবে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন, যেসব প্রতিযোগী দেশের শুল্কহার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি, তাদের বাজার থেকেও বাংলাদেশ অতিরিক্ত সুবিধা পেতে পারে।