শিগগির দেশে চালু হতে যাচ্ছে ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম (আইআইপিএস)। এর মাধ্যমে মোবাইল ওয়ালেট, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একক নেটওয়ার্কে যুক্ত করে দ্রুত, সহজ ও সাশ্রয়ী ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
গতকাল রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও গেটস ফাউন্ডেশন আয়োজিত যৌথ আলোচনায় তিনি বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে আন্তঃসংযোগযোগ্য পেমেন্ট সিস্টেম অপরিহার্য। এটি চালু হলে সরকারি ভাতা, ভর্তুকি ও বেতন সরাসরি জনগণের হাতে পৌঁছাবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।
গভর্নর জানান, দেশে এখনো প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে। কেবল সেবার কভারেজ নয়, বরং মানুষকে গভীরভাবে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করাই প্রকৃত অন্তর্ভুক্তি। এ জন্য মাইক্রো ক্রেডিট খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে।
বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে, তবে ঋণ বিতরণে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নারীদের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়ে গভর্নর বলেন, অন্তত ৫০ শতাংশ এজেন্ট নারী হতে হবে, যাতে ঘরে ঘরে আর্থিক সেবা পৌঁছে যায়। একই সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো আরও বেশি কার্ড ইস্যু করতে পারবে, যা গ্রাহকের সুবিধা ও রাজস্ব আয় বাড়াবে।
তিনি জানান, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ন্যানো লোনের সীমা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং তা আরও বাড়ানো হবে। তবে নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে ব্যবসায়ীদের জন্য ‘বাংলা কিউআর কোড’ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিবছর নগদের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে, ফলে ব্যাংক খাতের অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতি ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল ব্যাংক চালুর প্রস্তুতি চলছে। এবার গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরীক্ষিত প্ল্যাটফর্ম ‘মোজালুপ’ ব্যবহার করে আইআইপিএস বাস্তবায়ন করা হবে।
আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে বর্তমানে ২০ কোটির বেশি এমএফএস অ্যাকাউন্ট থাকলেও অর্ধেকেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক এখনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার বাইরে। গ্রামীণ-শহর বৈষম্য, লিঙ্গভিত্তিক ব্যবধান ও সেবা প্রদানকারীর সীমিত আন্তঃসংযোগ বড় বাধা হয়ে আছে।
তারা তানজানিয়া, পাকিস্তান ও রুয়ান্ডার উদাহরণ টেনে জানান, এসব দেশে আন্তঃসংযোগযোগ্য পেমেন্ট সিস্টেম চালুর ফলে খরচ কমেছে, দক্ষতা বেড়েছে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণও বেড়েছে।
শেষে চারটি অগ্রাধিকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়- বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা, বাংলাদেশের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্মে ঐকমত্য গঠন, ন্যায্য প্রতিযোগিতার জন্য নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালীকরণ, আইআইপিএস বাস্তবায়নের রোডম্যাপ প্রণয়ন। এ উদ্যোগ শুধু আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াবে না, বরং জি-২০ আন্তঃসীমান্ত পেমেন্ট রোডম্যাপ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে জানান তারা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন