পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করার দায়ে ৯ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে চারটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় গুরুতর অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে আরও ছয়টি অডিট ফার্মকে ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ৯৭৩তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ৯ জনকে এবং জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে মোট ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ওই ৯ জন এবং কোম্পানিটি ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী পেপারের শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করায় এই অর্থদ-ে দ-িত করা হয়েছে।
জরিমানা হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক টিআইএম নুরুল কবিরকে ১ কোটি ৩ লাখ, ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্স মজুমদারকে ১ কোটি ৩ লাখ, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শাহ জালাল উদ্দিনকে ১ কোটি ৩ লাখ, পরিচালক চৌধুরী ফজলে ইমামকে ১ কোটি ৩ লাখ, মোহাম্মদ আদনান ইমামকে ১ কোটি ৩ লাখ, নিলোফার ইমামকে ১ কোটি ৩ লাখ, ওরাকল সার্ভিসেস লিমিটেডের পক্ষে মনোনীত পরিচালক হাসান শহিদ সরোয়ারকে ১ কোটি ৩ লাখ, স্বতন্ত্র পরিচালক জহরুল সৈয়দ বখতকে ১ কোটি ৩ লাখ এবং রোকেয়া ইসলামকে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২০১৯ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় অনিয়মের জন্য এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে, রিং সাইন টেক্সটাইলের ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় অনিয়মের জন্য আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যকাউন্ট্যান্টসকে, আমান কটন ফাইবারসের ২০২০ অর্থবছরের নিরীক্ষায় অনিয়মের জন্য ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যকাউন্ট্যান্টসকে এবং ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় অনিয়ম করায় এ নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষকদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন ধরা পড়েছে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তাই, এই অনিয়ম গোপন করার কারণে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি, বিনিয়োগ স্কিম এবং মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা ও অ্যাস্যুরেন্স কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না কেন, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।