পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, মানসম্মত অডিট রিপোর্ট ও তথ্যপ্রবাহে স্বচ্ছতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী।
গতকাল শনিবার জাগোনিউজ২৪.কম আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাগো নিউজের সম্পাদক কে. এম. জিয়াউল হক এবং সঞ্চালনা করেন ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সাঈদ শিপন।
এজিএম-এ গঠনমূলক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে শাকিল রিজভী বলেন, আগে বিনিয়োগকারীরা এজিএমে গিয়ে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন, আলোচনায় অংশ নিতেন। এখন এজিএম হয়ে গেছে নিয়ন্ত্রিতÑ ভাড়াটে লোক এনে এজেন্ডা পাস করানো হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী বাস্তব তথ্য থেকে বঞ্চিত হন।
শাকিল রিজভী প্রস্তাব করেন, ডিএসই অডিটোরিয়াম বা নিরপেক্ষ কোনো স্থানে ফেয়ার ও এজেন্ডাভিত্তিক এজিএম আয়োজন করা হোক, যাতে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তথ্যপ্রবাহে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে শাকিল রিজভী জানান, অনেক কোম্পানির ওয়েবসাইটই ঠিকমতো আপডেট করা হয় না। বিনিয়োগকারীরা সঠিক তথ্য পান না। অথচ স্টক এক্সচেঞ্জ শুধু কোম্পানির সরবরাহ করা তথ্যই প্রকাশ করে। তাই কোম্পানিগুলোকেই আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
মানসম্মত অডিট রিপোর্টের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, যদি অডিট রিপোর্টে বিনিয়োগকারীর বিশ্বাস না থাকে, তাহলে বাজারে আস্থাও ফিরবে না। আমরা শুধু কাগজে-কলমে শেয়ারদর বাড়াতে চাই না, বরং কোম্পানির বিক্রি, উৎপাদন ও মুনাফা বাড়াতে হবে।
বাজার ঠিক করতে একাধিক পক্ষের সমন্বিত সংস্কার চাই, শুধু কমিশন বা একক প্রতিষ্ঠান দিয়ে সংস্কার সম্ভব নয় উল্লেখ করে শাকিল রিজভী বলেন, ডিএসই, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সাংবাদিক, আইনজীবী, অর্থনীতিবিদ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টÑ সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তার যৌক্তিকতা দিতে হবে। পারস্পরিক আন্ডারমাইন না করে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
আর্থিক খাতের সংকট ও বিনিয়োগকারীর ক্ষতি বিষয়ে রিজভী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, লিজিং কোম্পানি ও কিছু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু কেউ দায় নিচ্ছে না। এটা বাজারের জন্য নেতিবাচক বার্তা।
বিনিয়োগের ঝুঁকি সবসময় থাকে উল্লেখ করে ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ বা কমিশন কারো মুনাফার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তবে তথ্য ও অডিট রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চয়তা দিতে হবে।
শাকিল রিজভী জানান, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখনো জিডিপির ৬০ শতাংশ ছুঁতে পারেনি, অথচ উন্নত বাজারে এ হার ৭০-৮০ শতাংশ। তবে গত এক বছরে দুর্বল কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি না হওয়া ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, নতুন কোম্পানি তখনই বাজারে আসবে, যখন লেনদেন বাড়বে। আইপিও না থাকলে বিও অ্যাকাউন্ট কমে যাওয়া স্বাভাবিক।
বিদেশি বিনিয়োগকারীর মনোভাব নিয়ে শাকিল রিজভী বলেন, কারেন্সি ডিভ্যালুয়েশনের (মুদ্রার অবমূল্যায়ন) আশঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মাঝে মাঝে শেয়ার বিক্রি করে চলে যান। কিন্তু রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বাড়লে তারা ফিরে আসেন। তাই স্থিতিশীল মুদ্রানীতি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ডিএসইর বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আশা জাগাতে এখন আমাদের এজিএমে স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, মানসম্মত অডিট রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা, তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে আধুনিকতা আনা, সমন্বিতভাবে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং কোম্পানির গুণগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য মো. আল-আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মনিরুজ্জামান, হিসাববিদ মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট মো. মামুনুর রশীদ, জাগোনিউজ২৪.কম-এর প্লানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ, বার্তা সম্পাদক মাহবুব আলম রনি, চিফ রিপোর্টার ইব্রাহিম হোসেন অভি প্রমুখ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন