ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

চলতি বছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৬২ বার 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ১২:৫৩ এএম

স্বর্ণের দর ছুটছেই; লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মূল্যবান এই ধাতুর দর। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের (২২ ক্যারেট) প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এখন ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই স্বর্ণের দাম এত উচ্চতায় ওঠেনি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ বারই বেড়েছে আর কমেছে মাত্র ১৮ বার। গত বছর পুরো সময়ে দাম সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার। আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড গড়ার পর দেশের বাজারেও মূল্যবান এই দাতুর দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, গত ২০ আগস্ট থেকে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম টানা বাড়ছে। সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজুসও দেশের বাজারে এই ধাতুর দাম বাড়িয়ে চলেছে। মাঝে দুই দিন নিম্মমুখী হওয়ায় দেশের বাজারেও কিছুটা কমানো হয়। বাজুস সাধারণত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার দিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে। পরদিন থেকে সারা দেশে সেই দরে স্বর্ণ বিক্রি হয়। তবে মাঝেমধ্যে দিনে দুবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানো-কমানোর ঘোষণা দিয়ে থাকে সংগঠনটি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, গত বুধবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হবে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩০ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্বর্ণের দাম ছাড়াল ৪ হাজার ডলার

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন ইতিহাস গড়েছে। গত মঙ্গলবার এই প্রথম প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ডলার ছুঁয়েছে। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিশ্ব অর্থনীতির ধীরগতি, যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদ কমার সম্ভাবনাÑ সব মিলিয়ে এই নিরাপদ সম্পদের দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেড়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনা বেড়ে যাওয়া, স্বর্ণনির্ভর এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের দুর্বলতা, খুচরা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহÑ এসব কারণে স্বর্ণের দামের এই উল্লম্ফন।

বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনাকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে ১৯৮৬ সালের পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্বর্ণের দাম সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, কম সুদের হার ও অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিবেশে স্বর্ণের দাম সাধারণত বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে স্বর্ণ নির্ভরযোগ্য রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। কেননা, মূল্যস্ফীতি বাড়লেও স্বর্ণের দাম কমে না।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন থাকায় ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকেরা এখন সরকারি অর্থনৈতিক তথ্য পাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করার চেষ্টা করছেন। বাজার বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, আগামী ২৮-২৯ অক্টোবরের বৈঠকে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমাতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ডিসেম্বরেও তারা নীতি সুদহার কমাতে পারে। অস্ট্রেলীয় খনিজ অনুসন্ধান ও সম্পদ উন্নয়ন কোম্পানি স্করপিয়ন মিনারেলসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মাইকেল ল্যাংফোর্ড বলেন, মার্কিন ডলারের মান আরও কমতে থাকলে আগামী ছয় মাসে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৩০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। শতকোটিপতি ও মার্কিন বিনিয়োগকারী কেন গ্রিফিন অবশ্য এ প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তার ভাষায়, ‘ডলারের চেয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের উত্থান উদ্বেগজনক। মানুষ এখন নিজেদের সম্পদ ডলারের প্রভাব থেকে দূরে রাখতে বা ঝুঁকি কমাতে চাইছে। এদিকে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস গত সোমবারের পূর্বাভাসে স্বর্ণের দাম আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসের জন্য তাদের পূর্বাভাস ৪ হাজার ৩০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৯০০ ডলার করেছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সেপ্টেম্বরে টানা একাদশ মাসের মতো তাদের রিজার্ভের জন্য সোনা কিনেছে বলে জানা গেছে।

গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বা প্রতি আউন্স ৫৪ দশমিক ৬৩ ডলার। গত এক মাসে বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা প্রতি আউন্স ৩০৮ দশমিক ৯৭ ডলার। গত ছয় মাসে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ২১ শতাংশ বা ৮৬৯ দশমিক ৪৪ ডলার। গত এক বছরে বেড়েছে ৫১ দশমিক ৫২ শতাংশ বা প্রতি আউন্স ১৩৪৩ দশমিক ৭২ ডলার।