আসি আসি করছে শীত। উত্তরের হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। শীত মানে উষ্ণ পোশাকের গন্ধে ভরে ওঠা সকাল। কুয়াশা মাখা হাতে গরম কফির কাপ, উষ্ণ পোশাকে আলতো তাপ নিয়ে সময়টা হয়ে ওঠে বিশেষ। শীত আসার আর অল্প কিছুদিন বাকি। ইতোমধ্যেই বাজারে শুরু হয়ে গেছে শীতের পোশাক কেনাবেচা। শহর থেকে গ্রাম; সব জায়গাতেই শুরু হয়েছে শীতের প্রস্তুতি। দোকানপাটে হুডি, জ্যাকেট, ব্লেজার, সুয়েটারসহ নানা ধরনের পোশাক উঠতে শুরু করেছে। তবে এবারের শীতের ফ্যাশনে নতুন কিছু নয়, বরং পুরোনো ধারাই ফিরে আসছে নতুন রং ও নকশায়।
ফিরছে পুরোনো দিনের ফ্যাশন
এবারের শীতের সম্ভাব্য ট্রেন্ড বলছে, নব্বই দশকের ফ্যাশন আবারও ছুঁয়ে যাচ্ছে তরুণদের মন। তখনকার রেট্রো ভাইব বা নস্টালজিক ছোঁয়া এখনকার ডিজাইনে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ছেলেদের পোশাকে দেখা যাচ্ছে ফুল হাতা টি-শার্ট, ব্লেজার, হুডি, জ্যাকেট, সুয়েটার কিংবা ওভারকোটের দাপট। অনেকেই সাধারণ ডিজাইন থেকে একটু ভিন্ন কিছু খুঁজছেন। পাশাপাশি পুরোনো ধাঁচের ব্লেজার বা ক্লাসিক উল সুয়েটারের চাহিদাও বেড়েছে। তবে আগের থেকে রঙের ব্যবহার এবার অনেক বোল্ড। নেভি ব্লু, মেরুন, ধূসর, অলিভ কিংবা রস্টিক টোন তরুণদের বিশেষ পছন্দের কাতারে রয়েছে। কেউ বেছে নিচ্ছে ক্লাসিক কালো, কেউ আবার ফিরছে বেগুনি রঙে।
অন্যদিকে মেয়েদের ফ্যাশনেও এসেছে মিশ্র ধারা। ব্লেজার, শাল, পঞ্চ, সুয়েটারসহ নানা ধরনের পোশাক দেখা যাচ্ছে বাজারে। আবার ছেলেদের অনেক পোশাক এখন মেয়েদের সাধারণ সাজেও জায়গা করে নিচ্ছে। বিশেষ করে ক্যাম্পাস, অফিস কিংবা আড্ডার জায়গায় এখন সবাই এমন পোশাক খুঁজছেন যা আরামদায়ক, স্টাইলিশ এবং উষ্ণ।
জেন্ডার-নিউট্রাল পোশাক
বর্তমানে নির্দিষ্ট কিছু পোশাক ছাড়া বাকিগুলোর ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়েই পরতে পারে এমন পোশাক বেশি জনপ্রিয়। এই ট্রেন্ডের দরুন ছেলে-মেয়ে একই ধরনের ডিজাইনের পোশাক পড়তে পারছে। হুডি, জ্যাকেট বা সুয়েটশার্টের মধ্যে পার্থক্য এখন প্রায় নেই বললেই চলে। বড়সড় হুডি বা ওভারসাইজড জ্যাকেট এখন যেমন ছেলেরা পরে, মেয়েরাও সমান আত্মবিশ্বাসেই সেটি পরছে। এই জেন্ডার-নিউট্রাল ট্রেন্ড ফ্যাশন দুনিয়ায় এক নতুন স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে।
রঙে উষ্ণতা
যদিও এবার শীতে পোশাকের নামগুলো একই থাকছে, তবে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে রং এবং টেক্সচারে। এবারের ট্রেন্ডে উষ্ণ রঙের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে মেরুন, বেইজ, মাখন হলুদ, বাদামি কিংবা ডার্ক গ্রীন বেশি চোখে পড়ছে। এছাড়া হালকা ধূসর ও প্যাস্টেল শেডও জনপ্রিয়। রঙের এই ধারা শীতের আবহের সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে যায়। আবার এখন যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার জয়জয়কার, সেদিক বিবেচনায় এসব রং ছবি তোলার ক্ষেত্রেও দেয় শান্ত ও মানানসই লুক। ডিজাইনারদের মতে, মানুষ এখন এমন পোশাক খুঁজছে যা শুধু শরীরেই উষ্ণতা দেয় না, মনেও উষ্ণতা আনে। এছাড়া দিন দিন কাপড়ের মানেও আসছে পরিবর্তন। মিশ্র সুতি, ফ্লিস, উল, কটন-অ্যাক্রিলিক ফ্যাব্রিক এখন চাহিদার তুঙ্গে।
আরাম ও স্টাইল
অফিস ফ্যাশনে আগে শীতের পোশাক বলতে ব্লেজারই ছিল প্রধান। এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে নিত্যনতুন সংযোজন। হুডি-ব্লেজারের কম্বিনেশন, হাফ-জিপার জ্যাকেট, এমনকি সুয়েটার-ওভারকোটের; সবই এসেছে আধুনিক কর্মজীবীদের চাহিদা থেকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিস, মিটিং, কফি ডেটসহ সবখানে মানানসই পোশাক চায় আজকের তরুণ প্রজন্ম। একইভাবে মেয়েদের ফ্যাশনে এসেছে ওভারসাইজড ব্লেজার, হালকা ওজনের পঞ্চ বা উলের শাল। যা পরা যায় জিন্স বা মিডি স্কার্টের সঙ্গে। ফলে, ব্যবহারিকতা ও ফ্যাশন দুটোই এখন সমান গুরুত্ব পাচ্ছে।
কেন নস্টালজিক ভাইব
কেন মানুষ আবার পুরোনো ফ্যাশনের দিকে ফিরছে? অনেক ফ্যাশন বিশ্লেষক বলছেন, এর পেছনে কাজ করছে এক ধরনের ইমোশনাল কানেকশন। নব্বই বা শূন্য দশকের পোশাক অনেকের মনে স্কুল-কলেজ জীবন, শৈশবের শীতের দিন, সিনেমার চরিত্রের ফ্যাশন ইত্যাদি স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। সেই সময়ের মাফলারের গন্ধ, উলের টুপি কিংবা বড় বাটনওয়ালা সোয়েটার মিশে আছে এখনকার তরুণদের স্মৃতির পাতায়। তাই ডিজাইনাররা এবার সেই স্মৃতিকেই তুলে আনছেন আধুনিক কাটিং ও রঙের মাধ্যমে।
বাজারে পরিবর্তনের হাওয়া
দেশের বাজার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এবার স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছে। জামদানি শালের আধুনিক রূপ, হ্যান্ড-নিটেড সোয়েটারের ফিউশন ডিজাইন কিংবা দেশি কাপড়ে তৈরি ব্লেজার; সবকিছুই এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শীতের নতুন কালেকশন হাজির হয়েছে আগেভাগেই, যাতে ক্রেতারা পছন্দমতো পোশাক বেছে নিতে পারেন ঘরে বসেই।

