মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বিএনপি

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বিএনপি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভোটের নানা কারিশমায় দেড় দশকেরও বেশি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে শেষে জুলাই অভ্যুত্থানে সেই মসনদ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল দেশের ইতিহাসের সেরা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে। অংশগ্রহণমূলক ভোটের দাবিতে প্রথম থেকেই আন্দোলন করে আসছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে কাঠ-খড় কম পোড়াতে হয়নি দলটিকে। গুম, খুনসহ নির্যাতনের ফিরিস্তি শেষ হওয়ার মতো নয় বলছেন তারা। আর শত শত মামলার বোঝা বইতে গিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত তারা। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে বলেই বিশ্বাস বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। 

গত শনিবার খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় দেশের মানুষ। না হলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এদিকে গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আরেক অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারণী ফোরামের আরেক নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, যারা ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না তাদের ভিন্ন মতলব আছে।  

এদিকে সংস্কারে কমবেশি শর্ত দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে ঘুরেফিরে বারবার বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু জুন পর্যন্ত সময় দিতে নারাজ বিএনপি। দলটির দাবি, সংস্কারের জন্য নির্বাচন বিলম্ব করার কোনো কারণ নেই। ডিসেম্বরের মধ্যে তারা নির্বাচন চায়। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হাতে নিয়েছে।

এ বছরের ডিসেম্বরেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় বিএনপি। দলটির এই দাবির সঙ্গে একমত জাতীয় পার্টি ও বাম ঘরানার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মোট ৪৭টি দল। অন্যদিকে ভোটের মাঠে বিএনপির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী, পুরোনো মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১০টি দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে নয়। তারা ডিসেম্বর থেকে সময়সীমা জুন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। 

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষের পাল্লাই ভারী। যদিও এই ইস্যুতে দেশের রাজনীতিতে একধরনের অস্থিরতা চলছে। তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি। এতে যুগপৎ কর্মসূচির শরিকেরা ছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে বিএনপির আশঙ্কা নতুন গড়ে ওঠা দল এনসিপির চাওয়াতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। সরকারের দুজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকায় বিএনপির সন্দেহ আরও প্রগাঢ় হচ্ছে। উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়াতে সেই দুই উপদেষ্টাকে সড়ে দাঁড়ানোর কথা বলছে বিএনপি। 

নির্বাচন নিয়ে দিন দিন অনিশ্চয়তা বাড়ছে বলে মনে করেন রাজনীতিবিদরা। বিএনপির মতোই ডিসেম্বরে ভোট আয়োজনের পক্ষে অনড় যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৩৪টি রাজনৈতিক দল। এগুলো হলো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণতন্ত্র মঞ্চের ৬ দল, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও গণফোরাম। এর বাইরে ১২টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে ভোট চায়। দলগুলো হলো জাতীয় পার্টি, সমমনা ইসলামপন্থি চার দল, সিপিবি ও বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট, আমার বাংলাদেশও (এবি) চলতি বছরেই নির্বাচন চায়। দাবি আদায়ে বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন লেগেই আছে শহরজুড়ে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্র বলছে, গত ৯ মাসে রাজধানীতে আন্দোলন হয়েছে প্রায় আড়াইশ। বর্তমান অবস্থা দেখে সব দলই তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়। ডিসেম্বরে ভোট দিলে সরকারের জন্যই ভালো হবে বলে মনে করেন তারা। 

ভোটের অধিকার আদায়ে বিভাগে তারুণ্যের সমাবেশ করছে বিএনপি। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের এমন আয়োজনে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত বিএনপি। তবে দাবি আদায়ে শক্ত কোনো কর্মসূচি দিলে তাতে যেন হিতে বিপরীত না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হচ্ছে বিএনপিকে। সরকার চাপে থাকবে, কিন্তু তা কোনো ক্ষতির কারণ হবে না এমন কর্মসূচির কথাই ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে কৌশল নির্ধারণে নিজেদের সমমনা দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দলের সঙ্গেও বৈঠক হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দাবি আদায়ে শক্ত কর্মসূচি দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে এমন প্রস্তাব উঠেছে বৈঠকে । কাজে ক্ষতির কারণ হবে না এমন কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন নেতারা।

রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে শুরু থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট একটি রোডম্যাপ চেয়ে আসছে বিএনপি। এই দাবির সঙ্গে একাট্টা রয়েছে বিএনপির সমমনা দলগুলোও। সময় গড়ানোর সঙ্গে বিএনপি ও সমমনাদের দাবি জোরালো হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি সরকার। উপরন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিসহ অনেকের বক্তব্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন বিলম্বের আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে বিএনপিতে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সরকার চাইলে ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতেই পারেন। একটি নির্বাচনের জন্য কত সময় লাগে। এই সরকারের প্রধান কাজ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু নানা ইস্যুতে তারা নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলেই আমাদের মনে হয়। নির্বাচন দিতে যত দেরি করবে, ততই সংকট আরও বাড়বে। পতিত স্বৈরাচার ফিরে আসার সুযোগ পাবে। সংস্কারের দোহাই দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা ঠিক হবে না। অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। সেগুলো প্রকাশ করে কাজ শুরু করে দিলেই তো মানুষ বুঝতে পারে কত দূর এগোলো সংস্কার। মুখে মুখে সংস্কার চাইলে তো আর হবে না, তা তো বাস্তবায়নও করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি তিন মাসে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে, তারা কেন ১৭ মাসেও নির্বাচন করতে পারবে না?
 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই সরকার একটি দুর্বল সরকার। সেটি তারা হয়তো বুঝতে পারছে না। বিএনপি শুরু থেকেই তাদের সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু তারা তা এখন বুঝতে পারছে না। নির্বাচন নিয়ে কেন তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করছে না, এর পেছনে কোনো কারণ আছে কি না তা জানতে চায় দেশের মানুষ। মানুষ সন্দেহ করছে, এই সরকারের অন্য কোনো অভিলাষ আছে কি না। তাদের যদি দীর্ঘদিন থাকতে ইচ্ছা করে তবে নির্বাচন করে থাকুক। ভোট করে দেখুন মানুষ তাদের ভোট দেয় কি না। আমার মনে হয়, ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। অনেক রাজনৈতিক দলই চায় ডিসেম্বরে নির্বাচন হোক। অল্পকিছু দল চায় না, যারা চায় না তাদের পাঁচ বছর সময় দিলেও ভোটার জোগাড় করতে পারবে না।

Link copied!