শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম

বন্দর ও করিডর ইস্যুতে চাঙা বাম দলগুলো

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ১২:৪৭ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বাম রাজনীতিতে দেখা দেয় অনেকটা স্থবিরতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকে সাম্প্রতিককালেও প্রায় সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। মানুষের আস্থার শেষ ঠিকানাও ছিল বাম দলগুলো। সেই আস্থার জায়গা ফিরে পেতে আবারও রাজপথে একজোট হয়েছে তারা। বামদলগুলো মনে করে, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ বেড়েছে। যার প্রতিবাদে সরব হয়েছে তারা।

বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইনের সঙ্গে ‘মানবিক প্যাসেজ’ নাম দিয়ে করিডর চালুর চেষ্টা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের আধিপত্যবাদীর ধারাবাহিকতা বলে মনে করে। এসব উদ্যোগ রুখে দিতে ৪ দফা দাবি নিয়ে গতকাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে শুরু করেছে দুই দিনব্যাপী রোডমার্চ। যেখানে ৫০টির বেশি সংগঠন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বৃহৎ বাম ঐক্য গঠনেরও লক্ষ্য নেতাদের।

এদিকে দেশের বামপন্থি দল ও সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’-এর ব্যানারে এ রোডমার্চ আজ শনিবার বিকেলে শেষ হবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে রোডমার্চের দুই ইস্যুতে রাজনীতির মাঠে নিজেদের চাঙা করার কৌশলও নিয়েছে বামপন্থি এসব দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বামদের অভ্যন্তরীণ ও আদর্শগত বিরোধ কাটিয়ে উঠে সংঘবদ্ধ এ ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা ভালো উদ্যোগ। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের গণ-আন্দোলন না করলে কখনো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যাবে না।

বাম নেতারা বলছেন, ‘দেশের স্বার্থে কখনো আমরা আপোস করিনি এবং করব না। রাখাইনের সঙ্গে করিডর চালু ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়া হলে ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তাই এ ধরনের উদ্যোগ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরে আসার দাবি জানিয়ে আসছি। এরই মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ, সেমিনার করা হয়েছে। বন্দর-করিডর রক্ষার প্রচারণা জনদাবিতে পরিণত করতেই এবারের রোডমার্চ পালিত হচ্ছে বলেও জানান তারা।’ তারা বলেন, ‘এই আন্দোলনের ফলে দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে।’ 

রোডমার্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এনসিটিসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা, রাখাইনে করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর উদ্যোগ বন্ধ, মার্কিন, ভারতসহ আধিপত্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারসহ বিগত সব সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম সব চুক্তি বাতিলের দাবিতে গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে রোডমার্চ শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে রোডমার্চ নারায়ণগঞ্জ-সোনারগাঁও-চান্দিনা-কুমিল্লা হয়ে ফেনী পৌঁছায় এবং আজ শনিবার ফেনী থেকে যাত্রা শুরু করে বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শেষ হবে।

যেখানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত ৬টি বামপন্থি দল, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, ৭ দলীয় জোট ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা একসঙ্গে এ রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বামপন্থি, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন মিলিয়ে ৫০টির অধিক সংগঠন এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে বলে জানান আয়োজকেরা।

বামপন্থি দলগুলোর একাধিক সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের ফলে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতায় বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন সংঘটিত করার চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এ অবস্থায় বিদেশি শক্তিগুলোর বিরোধিতাকে নিজেদের রাজনীতি চাঙা করার কৌশল হিসেবে দেখছে দলগুলো। একই সঙ্গে এসব ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃহৎ বাম ঐক্য গঠনেরও লক্ষ্য রয়েছে নেতাদের।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা। এই আকাক্সক্ষা আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। এর আগে বিভিন্ন আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সব শহিদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এই আন্দোলন দীর্ঘদিনের।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ ৫০-এর অধিক দল-সংগঠন যুক্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা, সমরাস্ত্র কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব, স্টারলিংয়ের সঙ্গে চুক্তি ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ভূরাজনৈতিক প্রশ্ন জড়িত। এ রোডমার্চের পরেও যদি এসব বন্ধ না হয়, পরবর্তী সময়ে আমরা আরও কঠিন কর্মসূচি নেব।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাভুক্ত বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সদস্য মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন বলেন, ‘দেশের স্বার্থে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। ভারত-আমেরিকাসহ বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতেই এই রোডমার্চ। জনজীবনের সংকট, সমস্যা নিয়ে দেশের বামপন্থিরা সবসময়ই আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল এবং আছে। আগামী দিনে বামপন্থি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখবে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!