শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

ডেঙ্গু-করোনার সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার চোখরাঙানি

স্বপ্না চক্রবর্তী

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর গোড়ান মক্কা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমানের ৩ মেয়ে। তিন দিন আগে প্রথমে জ¦র ৮ম শ্রেণিতে পড়–য়া বড় মেয়ের। জ্বরের তীব্রতা এত বেশি যে বাধ্য হন হাসপাতালে নিতে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানান, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। প্লাটিলেট কমছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এরই মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হয় ৪ বছর বয়সী ছোট মেয়েটাও। সারা শরীরে তীব্র ব্যথায় কাতরাতে থাকে সে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানানো হয় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত সে। একই বাসায় থেকে এক মেয়ে ডেঙ্গুতে এবং আরেক মেয়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে পুরো পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। দুই মেয়েকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। সুস্থতার প্রহর গুনছেন স্বামী-স্ত্রী মিলে।

তাদেরই পাশের বিছানায় বনশ্রী থেকে আসা রুম্পা আহমেদের শিশু মেয়েটিও কাতরাচ্ছে তীব্র জ্বরে। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া না হলেও ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে জ্বরের তীব্রতা থার্মোমিটারে গিয়ে ১০৪ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। আতঙ্কে যেন রুম্পা আহমেদই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।

শুধু আনিসুর রহমান বা রুম্পা আহমেদ নন একই সঙ্গে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া আর করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজধানীবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র আতঙ্ক। এদিকে মশা মারতে নেই কার্যকর উদ্যোগ। তাই এডিস মশা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ খোদ সাধারণ মানুষই। এমন পরিস্থিতিতে একটা বড় ধরনের মহামারির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রকৃতিতে একটা অদ্ভুত অবস্থা বিরাজ করছে। হঠাৎ তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। আবার হঠাৎই তুমুল বৃষ্টি। এমন অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে মৌসুমি রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু, করোনা, চিকুনগুনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, নিউমোনিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই সময়টায় আমরা কয়েক রকমের জ¦রের রোগী পাচ্ছি। এর মধ্যে ভাইরাল ফ্লু, শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ, ডেঙ্গু, করোনা, চিকুনগুনিয়া, পানিবাহিত রোগ, টাইফয়েডের মতো রোগী পাচ্ছি। যখন জলবায়ু পরিবর্তন হয়, তখন নতুন কতগুলো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। যা নিষ্ক্রিয় ভাইরাসকে সক্রিয় কওে তোলে। এবার মৌসুমের আগেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। গত দুই বছর করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি বছর এটি আবারও আশঙ্কা জাগাচ্ছে। তাই মানুষজনকে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে নিজের সুস্থতার জন্য, পরিবারের সুস্থতার জন্য। যদিও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা ব্যক্তির একার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে নিজের বাড়িঘরে যেন জমানো পানি না থাকে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে রোগীর ভিড়। সরেজমিনে রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখা গেছে ডেঙ্গু-করোনার সন্দেহে থাকা রোগীরাই আসছেন বেশি। যাদের পরীক্ষা করে ভর্তি করার দরকার হচ্ছে, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। অন্যদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, নাতিশীতোষ্ণ এই আবহাওয়ায় শিশু, বয়স্ক ও কোমরবিডিটি (বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি) রোগীরা বেশি বিপাকে পড়ছেন।

শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফিউর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশে গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বিচিত্র আচরণ করছে। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে আসছে। আবার বৃষ্টিতে ভিজেও অসুস্থ হয়ে অনেকে হাসপাতালে আসছেন। তাদের অনেকেই জ্বর, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, হিটস্ট্রোক, বমি, ডায়রিয়া, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন। গলা ব্যথা, কাশি, সর্দি ও ঘুমের সমস্যা বেড়ে যওয়ার কথাও বলছেন অনেকে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছি। এর মধ্যে করোনা-ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। সবার মধ্যেই একটা আতঙ্ক কাজ করছে। সবাই মিলেই এই পরিস্থিতিটা সামাল দিতে হবে বলে আমি মনে করি। আমরা চিকিৎসকরা তো চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু যেহেতু আমরা জানি আমাদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা কী, সেহেতু তা মেনে চললে কিছুটা অন্তত ভালো থাকা যাবে।

তবে সবচেয়ে বেশি রোগী বাড়ছে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের ভর্তি করাতে নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুসন্তানকে ভর্তি করাতে নিয়ে আসা রোগীর মা ফারজানা আলম বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে চার বছরের বাচ্চার জ্বর ওঠে প্রথমে। পরে জন্মের সময় হওয়া নিউমোনিয়া আবারও বেড়ে যায়। গতকাল রাতে তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়ায় আজ আর দেরি করিনি। সকাল সকালই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তাররা ভর্তি করাতে বলেছেন।

এ সময়টা শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আবহাওয়ার যে অবস্থা, তাতে করে প্রাপ্তবয়স্করাই কাহিল হয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় শিশুদের তো কষ্ট বেশিই হবে। যাদের অ্যাজমা বা নিউমোনিয়ার সমস্যা রয়েছে, তা আবারও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. তুষার মাহমুদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিনই এমন এমন রোগী আসছে, যাদের পুরো পরিবারই জ্বরে আক্রান্ত। এর একটি কারণ হতে পারে হঠাৎ করে তীব্র গরমের পরে বৃষ্টির শীতল বাতাস।

অন্যদিকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধি। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট। জ্বরও এলে কারণ খুঁজে বের করার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কী রোগ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেহেতু ডেঙ্গুর তীব্রতাও শুরু হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে জ্বর হলে অনেকে এটিকে ডেঙ্গু মনে করেও চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু ডেঙ্গু শনাক্তে নির্দিষ্ট পরীক্ষা আছে। তাই সবাইকে এ সময়টায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এ সময়টায় অ্যাজমা রোগীদের ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বা শরীরে লবণের ভারসাম্য কমে যেতে পারে। এতে স্থূল, কিডনি বিকল রোগী ও বয়স্কদের বেশি ঝুঁকি হতে পারে। ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, কেমোথেরাপি চলা ক্যানসার রোগী ও স্টেরয়েড ওষুধ সেবনকারীদের তাপপ্রবাহ এড়িয়ে চলতে হবে। হাঁপানি, অ্যালার্জি, রাইনাইটিস, গলাব্যথা, গলার প্রদাহ থাকলে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
 
এ সময়টায় বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই সময়ে যারা দীর্ঘক্ষণ বাইরে কাজ করে তাদের রোদ-বৃষ্টিতে নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি রোদে কাজ করে তাহলে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে। কৃষক ও রিকশাচালকদের মতো যারা রোদ-বৃষ্টিতে পরিশ্রম করেন, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও কিডনি বিকলসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, বয়স্ক ও শিশুরাও ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ সময় ঘরের বাইরে যতটা কম যাওয়া যায়, ততই ভালো। যারা প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন তারা পানির সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইনের মতো করে খেতে পারেন।

তবে জ্বর হলে অবশ্যই আগে ডেঙ্গু টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর।

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পাচ্ছি লোকজন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি ডেঙ্গু, করোনা নাকি অন্য কোনো ভাইরাস, তা গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত রোগীর পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!