রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

বাংলাদেশ সুযোগ নিতে পারে, রয়েছে চ্যালেঞ্জ

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

বাংলাদেশ সুযোগ  নিতে পারে, রয়েছে চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপ করে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। এতে চীনের বাজার সংকুচিত হওয়ায় বিকল্প রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলে দ্রুত কাঠামোগত সংস্কার, উৎপাদন বৈচিত্র্য এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে। সতর্কতা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ছাড়া এই সম্ভাবনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এখনই সময় কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফিরে চীনকে টার্গেট করে নতুন শুল্ক আরোপ এবং বাণিজ্য রক্ষণশীলতার নীতি গ্রহণ করেছেন, যা শুধু চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেই প্রভাব ফেলছে না, বরং বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন ও বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তনের ঢেউ অনেক উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশেও প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এ সময় যেমন বড় সুযোগ, তেমনি বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এটা চূড়ান্ত নয়। এখন ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক চলছে। বৈঠক শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যে মূল্যস্ফীতি থেকে শুল্কনীতিতে উত্তেজনা

২০২৪ সালে সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতায় ফিরে আসে। নি¤œগামী মূল্যস্ফীতি ও প্রকৃত আয় বাড়ার কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্যে চাহিদা বাড়ে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) ২০২৫-এর এপ্রিল রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে ২০২৫ সালে তা কেবল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা ২০২৮ সালের মধ্যে ধীরে ধীরে ৩ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ধীরগতির পুনরুদ্ধারের পেছনে রয়েছে মার্কিন শুল্ক আরোপ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার নেতিবাচক প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর ১০ শতাংশ হারে বেজলাইন শুল্ক আরোপ করেছে, আর দেশভেদে যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, তা প্রথমে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।

পরে তা জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই শুল্কের ফলে চীনের রপ্তানি মার্কিন বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে, বিশেষ করে টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ খাতে। এর ফলে বিকল্প রপ্তানিকারক দেশগুলোর বাজারে প্রবেশের সুযোগ বেড়ে যাবে, যা বাংলাদেশ সুযোগ হিসেবে নিতে পারে। তবে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার কিছুটা বেশি হওয়ায় চ্যালেঞ্জও থাকবে।

বৈশ্বিক বাজার ও চীনের প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘোষণার পরপরই শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি ও খুচরা পণ্যের শেয়ারের দাম কমেছে। চীনা ইউয়ান দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এর বিপরীতে ভিয়েতনাম, ভারত, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ইত্যাদি উদীয়মান অর্থনীতির মুদ্রা সামান্য শক্তিশালী হয়েছে।

চীন পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাণিজ্য বাধা, শুল্ক ও কাঁচামালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের কৌশল অবলম্বন করতে পারে, যা বিকল্প রপ্তানিকারক দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, যেটি অনেক ক্ষেত্রে চীনা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে সরবরাহের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানির চিত্র

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ ও ৭ শতাংশ হারে পতন হলেও, আইএমএফ এবং ডব্লিউইওর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সাল থেকে তা দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। ২০২৬ সালে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি পৌঁছাবে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশে, যা পরে ধীরে ধীরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে স্থিতিশীল হবে। আমদানির ক্ষেত্রে মধ্যমেয়াদে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।

বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ম্যান-মেড ফাইবারভিত্তিক পণ্যের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সীমিত। এই পরিবর্তনে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে বড় বাজার হারানোর ঝুঁকি থেকে যায়।

বিশেষজ্ঞ মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা বাংলাদেশের জন্য স্বল্প মেয়াদে নতুন বাজার তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে কাঠামোগত দুর্বলতা আমাদের বড় বাধা। ম্যান-মেড ফাইবার শিল্পে বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও কাস্টমস আধুনিকায়ন জরুরি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মার্কিন বাজার থেকে আগ্রহ বাড়লেও উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায় সরকারকে সহায়তা বাড়াতে হবে। বন্দর, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ মার্টিন ওয়েবার বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের জন্য এটি গ্লোবাল শিফটের বিরল সুযোগ। কিন্তু তা টেকসই করতে হলে বৈচিত্র্য, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে। একবার চীননীতি বদলে ফেললে উইন্ডো দ্রুত বন্ধ হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রভাব ও করণীয়

বাংলাদেশের রপ্তানি খাত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলো হলো ম্যান-মেইড ফাইবারভিত্তিক পোশাকশিল্পে উন্নয়ন, অবকাঠামো ও লজিস্টিক আধুনিকায়ন, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, উচ্চমানের পণ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং এবং বাজারে প্রবেশ। সরকার এরই মধ্যে রপ্তানি খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বৃদ্ধি, বন্দর আধুনিকায়ন এবং নতুন মার্কেট এক্সপ্লোরেশন পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশের বাজার অংশীদারিত্ব সংকুচিত হতে পারে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্ববাজারে ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছে। দেশের রপ্তানির বড় অংশ এই খাত থেকেই আসে, যা লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস। তবে বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা বদলাচ্ছে। ম্যান-মেড ফাইবারভিত্তিক পোশাকের চাহিদা বেড়েই চলেছে, যেখানে বাংলাদেশের প্রস্তুতি এখনো সীমিত। তাছাড়া পরিবেশবান্ধব, টেকসই পোশাক ও গুণগত মানের দিকে গুরুত্ব বাড়ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাত কে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করানো। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, যেখানে সফটওয়্যার রপ্তানি ও আইটি সেবার পরিধি বাড়ছে। তবে আন্তর্জাতিক মানদ-ে উপযোগী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সফলতার চাবিকাঠি।

চামড়া ও চামড়াভিত্তিক পণ্যে বাংলাদেশ ঐতিহ্যগত সক্ষমতা রাখলেও আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অভাবে বিশ্ববাজারে বেশি অংশ নিতে পারেনি। কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে বিশ্ববাজারে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও গুণগত মান, প্যাকেজিং ও আন্তর্জাতিক সনদ অর্জনে জোর দিতে হবে বলেও তাদের মত।

তা ছাড়া সরকারের বহুমাত্রিক কৌশল গ্রহণ প্রয়োজন, যাতে রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য বাড়ানো যায়। দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামো আধুনিকায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলাই এর মূল ভিত্তি। বন্দর ও কাস্টমস প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন করলে পণ্যের সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ দ্রুততর হবে বলেও সংশ্লিষ্টদের মত।

বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক রাখতে এখন সময় এসেছে শুধু পোশাক নয়, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, কৃষি ও হাই-টেক পণ্য খাতে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন বাড়ানোর। সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে এ রূপান্তর সফল হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ব্যাবসায়িক অংশীদারিত্ব

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ব্যাবসায়িক অংশীদারিত্ব জোরদার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বড় অর্থনীতির সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক স্থাপন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বাংলাশেদের পোশাক, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রধান বাজার। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্য নীতিমালা কঠোর হওয়ার কারণে বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাজারে প্রবেশের বাধা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধার বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নতুন প্রাণ জোগাবে। জিএসপি সুবিধা মানে হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিভিন্ন পণ্যে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কে বাজার প্রবেশের সুযোগ দেওয়া, যা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বাড়ায়।

এ ছাড়া বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন, যার ফলে বাংলাদেশে নতুন ও বৃহৎ বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি করছে, যা দ্রুততর ও বহুমাত্রিক হওয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ব্যাবসায়িরা বলছেন, সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও বাণিজ্য মিশনের মাধ্যমে এসব চুক্তি সফল করার পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এই সম্পর্ক জোরদারে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাণিজ্য মেলা, বিনিয়োগ সম্মেলন এবং উচ্চ পর্যায়ের ব্যাবসায়িক সংলাপ এসব উদ্যোগকে গতিশীল করে।

তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মাবলি, পরিবেশ ও শ্রম নীতিমালা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সে জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন ও প্রয়োগে সজাগ হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য উৎপাদন ও পরিবেশনের মাধ্যমে বৈদেশিক বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখা সম্ভব।

এ ছাড়া সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ, ডিজিটালাইজেশন, লজিস্টিক উন্নয়ন এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ সরকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশকে উন্নত করবে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আস্থা বাড়াবে।

ডিজিটালে রূপান্তর ও প্রযুক্তির ভূমিকা

বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে হলে যে কোনো দেশের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো ও ডিজিটালে রূপান্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই দিক আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ পণ্যের দ্রুত ও নিরাপদ সরবরাহ, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কাস্টমস প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছ বাণিজ্য পরিবেশ বিনিয়োগকারীদের আস্থা গঠনের মূল উপাদান হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বন্দর ও কাস্টমস ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন বাণিজ্যের গতি বাড়াতে একটি অত্যাবশ্যক উদ্যোগ হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্ব, অতিরিক্ত কাগজপত্র ও মানবনির্ভর প্রক্রিয়ায় সময় ও খরচ বাড়ায়। এই প্রক্রিয়া যদি পুরোপুরি ডিজিটাল ও স্বয়ংক্রিয় করা যায়, তাহলে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম অনেক সহজ, স্বচ্ছ ও দক্ষ হবে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন।

ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) সিস্টেম চালু হলে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩৫টিরও বেশি সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন, লাইসেন্স ও কাগজপত্রের কার্যক্রম একটি মাত্র অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সম্পন্ন করা যাবে। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ দুই-ই কমবে, সেই সঙ্গে দুর্নীতির সুযোগও হ্রাস পাবে। ইতিমধ্যে সরকার এই সিস্টেম চালুর কাজ শুরু করেছে, তবে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনো অনেক বাকি।

এ ছাড়া কাস্টমসের ‘রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’, ‘ই-পেমেন্ট’, ‘ই-ম্যানিফেস্ট’, ‘ই-লেটার অব ক্রেডিট’ ইত্যাদি ডিজিটাল ফিচার চালু ও প্রসারিত করা গেলে বাণিজ্য প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য একটি রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং সিস্টেম থাকলে তারা সরাসরি দেখতে পাবেন তাদের পণ্যের অবস্থা কোথায় রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহার কেবল সময় বাঁচায় না, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মান বজায় রাখতে এবং বৈশ্বিক লজিস্টিক চেইনে যুক্ত হতে সহায়ক হয়। বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উন্নতি অর্জনের জন্য ডিজিটাল বাণিজ্য পরিবেশ একটি অন্যতম শর্ত। তাই ডিজিটাল রূপান্তর বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশে বিপ্লব ঘটাতে পারে, যা কেবল রপ্তানি বাড়াবে না, বরং দেশকে একটি আঞ্চলিক লজিস্টিক হাবে পরিণত করতেও সহায়ক হবে।

Shera Lather
Link copied!