গোপালগঞ্জজুড়ে আতঙ্ক আর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে যোগ দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা। দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের পর গতকাল বুধবার শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশ মঞ্চে হুঁশিয়ারি দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুজিববাদীরা’ বাধা দিয়েছে, তার জবাব দেওয়া হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ দলটির অন্যান্য নেতারা।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জের পদযাত্রা ও সমাবেশে মুজিববাদীরা আজকে (গতকাল) বাধা দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আমরা বলেছিলাম, বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, সেই লড়াইয়ে জিততে হবে এবং সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছিলাম। আজকে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। অচিরেই আমরা এর জবাব দেব ইনশাল্লাহ।
নাহিদ বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, নতুন বাংলাদেশের পক্ষে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এই গোপালগঞ্জ যেন আর ‘মুজিববাদী’দের কেন্দ্র হয়ে উঠতে না পারে। যদি পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, নিজেদের জেলার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব, বাংলাদেশকে রক্ষা দায়িত্ব আমাদের নিজেদের নিতে হবে। যেমন আমরা গণঅভ্যুত্থানে নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, গোপালগঞ্জ নামের কারণে ভবিষ্যতের চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো স্থানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। কিন্তু গোপালগঞ্জে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হতে আমরা দেব না। মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে মুজিববাদীরা, গোপালগঞ্জকেও কলুষিত করেছে। সেই গোপালগঞ্জকে আমরা উদ্ধার করব এবং সমুন্নত করব। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেক সম্পদ আওয়ামী দখল করেছে। তাদের সঙ্গে বেইনসাফ করেছে। আমরা নতুন বাংলাদেশে সব ধর্মের অধিকার রক্ষা করব।
এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, আজকে ‘মুজিববাদীর’ বাধা দিয়েছে, তাদের জবাব দেওয়া হবে। আমরা ঘোষণা দিলে সারা বাংলাদেশ এই গোপালগঞ্জে এসে জড়ো হবে। কিন্তু আমরা সময় দিয়ে যাচ্ছি। আজকে যে হামলা হলো, কোন সাহসে বাধা দেওয়া হয়েছে, কোন সাহসে মুজিববাদীরা গোপালগঞ্জে এখনো আশ্রিত হয়ে আছে, কারা আশ্রয় দিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি এর সামধান না হয় তাহলে আমরা আবারও আসব গোপালগঞ্জে। আমরা নিজ হাতে দায়িত্ব নিয়ে গোপালগঞ্জকে মুজিবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করব ইনশাল্লাহ। মুজিববাদীদের কবর রচনা করে, বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচনা করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব এটা আমাদের আপনাদের কাছে ওয়াদা বলে জানান তিনি।
সমাবেশে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আগামী বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে গোপালগঞ্জের বিবেকবান মানুষদের সামনের সারিতে রেখে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই। সংগ্রামী সহযোদ্ধারা, এই গোপালগঞ্জবাসী আমরা আপনাদের কখনোই ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে এক কাতারে ফেলতে চাই না। কিন্তু আপনাদের আশপাশে যারা ফ্যাসিস্টদের দালালি করে বেড়াচ্ছে, তাদের থেকে নিজেদের আলাদা করতে হবে। এই আলাদা অবস্থানই আপনাদের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেবে। বোনেরা-মায়েরা একসময় রাজপথে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। সেই চেতনা থেকেই আমাদেরও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোওয়ারী বলেন, শেখ পালিয়েছিল পাকিস্তানে, শেখের বেটি পালিয়েছে ভারতে। এই শেখের বেটি বাংলাদেশকে ছারখার করার জন্য গোপালগঞ্জের নাম ব্যবহার করেছে। খোঁজ নিয়েছি, শেখের বেটির পাশের বাড়ির লোকের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। বাস্তবিক ক্ষেত্রে তাদের নাম ব্যবহার হয়েছে সবখানে, কিন্তু গোপালগঞ্জবাসীও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আর এই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন শেখের বেটি হাসিনার দ্বারা।
তিনি বলেন, শেখের বেটিকে আমরা ভারতে পাঠিয়ে দিয়েছি। গোপালগঞ্জবাসীর আর ভয় নাই। শেখ পরিবার দ্বারা যারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের ভয় নাই। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য পদযাত্রা করছি, আপনাদের দুয়ারে হাজির হয়েছি। আমরা রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। শেখের বেটি, শেখের নামে যে রাজনীতি হয়েছে, পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আমরা ভালোবেসে নতুন একটি বাংলাদেশ গঠনের অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছি। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। নাসীরুদ্দীন পাটোওয়ারী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ ও বগুড়া দুটি জেলার অবদান যেমন রয়েছে, তেমনি বৈষম্যের ক্ষেত্রেও তাদের নাম রয়েছে। আমরা ব্যক্তির রাজনীতি করতে চাই না। বগুড়া, ফেনী, গোপালগঞ্জের রাজনীতিও করতে চাই না। আমরা বাংলাদেশের রাজনীতি করতে চাই। তাই আমি আহ্বান জানাচ্ছি, বগুড়া, গোপালগঞ্জবাসীকে এনসিপির ছায়াতলে আসার জন্য।
এদিকে, মঞ্চে উঠেই দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগানে সমাবেশস্থল উত্তাল হয়ে ওঠে। সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘হাসিনা আপনাদের ছেড়ে পালিয়ে গেছে। উনি গোপালগঞ্জকে ধারণ করলে ভারত না গিয়ে গোপালগঞ্জে আসতেন। ওনার মতো স্বার্থপর, উনি ওনার ফ্যামিলির মানুষ ছাড়া গোপালগঞ্জবাসীর কথা একববারও ভাবেন নাই। গোপালগঞ্জ বাংলাদেশের হয়ে উঠতে পারেনি। আপনারা বাংলাদেশের হয়ে উঠুন। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে গোপালগঞ্জকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। আমরা আহ্বান জানাব, জালিমের শাসন থেকে মুক্ত করেছি।
পরবর্তীতে স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি স্লোগান দেন‘মুজিববাদ মুজিববাদ, মুর্দাবাদা মুর্দাবাদ’; ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’; ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপ-দাদার’; ‘এই দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’; ‘আমার দেশ তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’।
আপনার মতামত লিখুন :