ঢাকা সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫

গোপালগঞ্জে গণগ্রেপ্তার আতঙ্ক নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ০৩:০৪ এএম

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১০ জনে। গতকাল রোববার নতুন করে সদর থানা থেকে ৯ জন, কোটালীপাড়া থানা থেকে ৮ জন, মুকসুদপুর থানা থেকে ৪ জন এবং কাশিয়ানী থানা থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত শনিবার রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলায় কারফিউ জারি ছিল। তবে পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালত এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত ছিল। সভা-সমাবেশ, মিছিল ও একসঙ্গে মানুষের চলাচল ছিল নিষিদ্ধ।

কারফিউ শেষ হলেও জেলাজুড়ে জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ। সীমিত আকারে কিছু দোকানপাট খুললেও শহরের বড় অংশজুড়ে ছিল অচলাবস্থা। গণপরিবহন স্বাভাবিক না থাকায় পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

গত ১৬ জুলাই এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৪ জন। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জনে। এ ঘটনায় পুলিশ পৃথক আটটি মামলায় আট হাজার ৪০৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করে। সংঘর্ষের পরপরই জেলা প্রশাসন কারফিউ জারি করে, যা একাধিকবার শিথিল করে আবার কার্যকর করা হয়।

গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালকে ঘিরে ১৪৪ ধারা বহাল থাকলেও কোথাও কোনো মিছিল বা পিকেটিং চোখে পড়েনি। তবে দোকানপাট আংশিক খোলা থাকায় ও জনসাধারণের চলাচল সীমিত থাকায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি বিএনপির: গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপি এক সংবাদ সম্মেলন করে। বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘নিরীহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এই অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। না হলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন কাজ করছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর থেকে পুরো গোপালগঞ্জ এখনো থমথমে। ৩১০ জনের গ্রেপ্তার, ১৪৪ ধারা, নিয়মিত অভিযান এবং হরতালের প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে চরম উৎকণ্ঠা। অনেকেই বলছেন, অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ জরুরি, না হলে এই অস্থিরতা জনজীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।