ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

ধারণা আসিফ নজরুলের

শেখ হাসিনার শেষ দিন ভারতেই কাটবে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ১২:২৩ এএম

শেখ হাসিনার বিচার হলেও তাকে হয়তো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আমরা জানি, প্রধান যে আসামি আছে, আমার ধারণা, আমি জানি না এভাবে বলাটা ঠিক হচ্ছে কি না, তার শেষ দিন ভারতেই কাটবে। তাকে বোধহয় আমরা কখনো পাব না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনে যে ঘৃণা নিয়ে সে বেঁচে থাকবে, সেটাও যদি আমাদের অর্জন হয়, সেটাও কম নয়। এত ঘৃণা মানুষের, এত কষ্ট, এত ক্ষোভ। এই ঘৃণা থেকে, ক্ষোভ থেকে, ক্রোধ থেকে আশা আছে, সংস্কারের মাধ্যমে এ রকম শাসক যেন এ দেশে আর তৈরি না হয়। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি নেই।


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে গতকাল মঙ্গলবার ‘রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকা-’ শীর্ষক প্রথম আলোর নতুন অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন আইন উপদেষ্টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানটি হয়।


জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্বিচারে মানুষ হত্যা প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও কিছু কাজ নিষেধ করা আছে। কেউ পালাচ্ছেন, নিরস্ত্র মানুষ, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেনÑ এমন মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রেও হত্যা করা যায় না। পৃথিবীর যেকোনো আইনে এটা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে দেখা গেছে, পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর একজন মানুষ হাতজোড় করছেন, তাকে কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। একটা মানুষ মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, তার মাথায় গুলি করা হয়েছে। লাশ পুড়িয়ে দিয়েছে।


অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, পুলিশকে যে এ রকম একটা অমানুষ, বেপরোয়া, ভয়াবহ বাহিনীতে রূপান্তর করেছে, সে কত বড় অমানুষ। কোনো একটা পুলিশ বাহিনী, সম্ভবত প্যালেস্টাইনের মানুষকে বোধ হয় এভাবে মারে।... একটা দেশের সুশৃঙ্খল বাহিনী, আমার ট্যাক্সের টাকায় চলা, তাকে (পুলিশ বাহিনী) ইসরায়েলি বাহিনীর মতো করে বাহিনী বানিয়েছে, যেটা এভাবে খুন করতে পারে।


জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অসংখ্য ফুটেজ আছে বলে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি শেখ হাসিনার স্ট্যান্ডার্ডে বিচার করতাম, তাহলে এই বিচার চার থেকে পাঁচ মাসে হয়ে যেত। আমরা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ২০ বছর, ৩০ বছর পরও যেন বিচার নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, এজন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে এবং আইন সংশোধন করে বিচার করছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে বড় শান্তির দিন বোধ হয় থাকবে, বিচার যখন শেষ হবে।


আইন উপদেষ্টা বলেন, তিনি যখন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন, তখন শুভাকাক্সক্ষীরা বলেছেন, তিনি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হবেন। কারণ, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হলো সমালোচিত হওয়ার জায়গা। এই সরকার চলে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন তিনি।


আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা জানেন, কেন ঝুঁকিতে থাকব। দুঃখ নাই, আল্লাহ আমাকে এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছেন দায়িত্ব পালনের জন্য। আমার জানা মতে, এই দায়িত্ব পালনে আমার ও টিমের একবিন্দু গাফিলতি নেই। একবিন্দু অবিচার করার ইচ্ছা নেই। সুবিচার করার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। ইনশা আল্লাহ, আশা করি, আমাদের সরকারে থাকা অবস্থায় তার (শেখ হাসিনা) বিচার শেষ হবে।