ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০২:২৪ এএম

গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মসজিদ মার্কেটে প্রকাশ্যে আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) নামে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা এবং সদর মেট্রো থানার পাশে ‘মব তৈরি করে’ আনোয়ার হোসেন সৌরভ (৩২) নামে অপর এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গাজীপুরসহ দেশজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গাজীপুরসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নির্মম দুটি ঘটনাই স্থানীয় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে খবর প্রকাশের জেরে ঘটেছে।  

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৌরভকে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে আহত করা হয়। পুলিশ, ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগরের মেট্রোপলিটন সদর থানার পাশে কয়েকজন দুর্বৃত্ত আনোয়ার হোসেন সৌরভকে মারধর করে। তার হাত ধরে টেনে মাটিতে ফেলে ইট দিয়ে পা থেঁতলে দেওয়া হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক লাফিয়ে তাকে লাথি মারছে। আরেক যুবক ইট নিয়ে তার পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে পুলিশ সৌরভকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে গাজীপুরে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সাংবাদিককে হত্যা এবং আরেকজনকে আহত করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, থানার সামনে একজন সাংবাদিককে মারধর, পুলিশের দায়িত্ব কী? তারা কোথায়? এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

নেটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, এক বছর পার হয়ে গেলেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। অপরাধীরা প্রকাশ্য মানুষ হত্যা করছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। চাঁদাবাজদের পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। মানুষের জীবনের দাম নেই। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর মানুষ আতঙ্কে থাকছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি ছিল এটা ঠিক। পুলিশের উপস্থিতির কারণেই অপরাধীরা ঘটনা ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ফরিদ নামের মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়ছে। এ ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে এই হত্যাকা-, তা জানার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ফুটেজ ও ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা করছি।

গত ৫ আগস্টের প্রায় এক সপ্তাহ পর পুলিশ কাজে যোগ দিলেও দীর্ঘ ১২ মাসেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার একাধিকবার বিশেষ অভিযান চালালেও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, তাদের মনোবল এখনো ফিরে আসেনি। ধীরে ধীরে পরিবেশ ঠিক হয়ে যাবে। জুলাই-আগস্টের ট্রমা থেকে বের হতে সময় লাগবে। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা ও নির্যাতনের পর দেশের সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আক্রমণ করে। মূলত পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কায় মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা ভয়ে ভয়ে ডিউটি করেন।