সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ৬ লেনের কাজ শুরু করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মহাসড়কের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ধারাবাহিকভাবে কিছু কাজ হলেও চলতি বর্ষা মৌসুমে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে শুরু হয় চরম ভোগান্তি। খানা-খন্দে ভরা সড়কে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তির কারণে সিলেট-ঢাকা রেলপথে যাত্রীদের ভ্রমণ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ফলে প্রতিটি স্টেশন থেকে আসনের চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ যাত্রী ভ্রমণ করছেন ট্রেনে করে। ফলে সিলেট-ঢাকা রুটে ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম রুটেও ট্রেনের টিকিট হয়ে গেছে অমাবস্যার চাঁদ।
জানা যায়, সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ব্রিটিশ আমলের। এই পথের অতিগুরুত্বপূর্ণ চারটি স্টেশন হলো শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, ভানুগাছ ও শমশেরনগর। স্টেশনগুলো পর্যটনের অন্যতম জেলা মৌলভীবাজারে অবস্থিত। এ জেলায় বছরে লাখো পর্যটকের পা পড়ে। এ ছাড়া রেলপথে যাতায়াতকারী স্থানীয় বাসিন্দারা তো আছেনই। কিন্তু সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে চরম ভোগান্তির কারণে মৌলভীবাজারের রেলস্টেশনগুলোয় ট্রেনের টিকিট যেন অমাবস্যার চাঁদ। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এ সংকট। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয়দের।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেট রুটে প্রতিদিন ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এর মধ্যে চারটি ট্রেন সিলেট-ঢাকা এবং দুটি সিলেট-চট্টগ্রামে চলাচল করে। এই ছয়টি ট্রেনই মৌলভীবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন শ্রীমঙ্গলে থামে। এ ছাড়া শমশেরনগর, ভানুগাছ ও কুলাউড়ায়ও স্টপেজ রয়েছে। শ্রীমঙ্গল স্টেশন দিয়ে জেলার অধিকাংশ যাত্রী ও পর্যটক যাতায়াত করেন। কিন্তু স্টেশনগুলোয় চাহিদার তুলনায় টিকিটের বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রতিদিন ৫ হাজার যাত্রীর বিপরীতে যাওয়া-আসা মিলে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে মৌলভীবাজারে।
শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, ভানুগাছ ও শমশেরনগর স্টেশন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের ওপর দিয়ে ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করলেও স্থানীয়রা খুব একটা ট্রেনে যাতায়াত করতে পারেন না। স্টেশনে গেলেই শোনা যায়, টিকিট নেই।
অথচ এই রুটে প্রতিদিন ৫ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। সব কয়টি ট্রেন মিলে জেলার চারটি স্টেশনে ১ হাজার ৬০০ টিকিট বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া স্টেশনে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ২৫০টি টিকিট। এ ছাড়া শমশেরনগর ও ভানুগাছ স্টেশনে বরাদ্দ রয়েছে ৩০০টি টিকিট। স্থানীয়রা বলেছে, প্রায় ১১০ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনটি চালু হয়। সে সময় ব্রিটিশরা এ অঞ্চলের চা ও অন্যান্য পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করত রেলপথে। ট্রেন ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ায় পরে যাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।
শ্রীমঙ্গল স্টেশনের মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন ও কুলাউড়া স্টেশনের মাস্টার রুমান আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই টিকিটের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। যাত্রীর তুলনায় অতি সামান্য টিকিট রয়েছে। এ ছাড়া মূল টিকিটের বাইরে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট দিয়েও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে ট্রেনের টিকিট বৃদ্ধির জন্য আমরা চলতি মাসের ২ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটা চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি, এ জেলায় ট্রেনের টিকিট বৃদ্ধি করা হবে।’
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন ছুটিতে বা অতিরিক্ত পর্যটক হলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা ১-২টা কোচ বৃদ্ধি করি। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী থাকলেও কোচ বৃদ্ধি করা হয়। কোচের একটা সীমাবদ্ধতা আছে, আমরা চাইলেই বৃদ্ধি করতে পারব না।’