# বেজমেন্টের পার্কিংয়ে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে পড়ে ছিল গাড়িটি
# নোয়াখালী থেকে রোগী নিতে এসে লাশ হন জাকির ও মিজান
# ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে: পুলিশ
রাজধানীর মৌচাকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের বেজমেন্ট পার্কিংয়ে একটি গাড়ির ভেতর থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়ির ভেতর দুজনের মরদেহ দেখে রমনা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, হাসপাতালের বেজমেন্টের পার্কিংয়ে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে গাড়িটি ছিল। নিহত দুজন ওই গাড়ির ভেতরেই ছিল। ফলে প্রচ- গরমে তাদের মরদেহ অনেকটা পচে গেছে। তবে কেন তাদের মৃত্যু হয়েছে, কোনো বিষক্রিয়া জাতীয় কিছু থেকে, নাকি হত্যা করা হয়েছেÑ এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বলা যাবে। নিহতরা হলেনÑ গাড়িচালক জাকির (৪৫) ও তার সহকারী মিজান (৪০)।
পুলিশ জানায়, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নোয়াখালী চাটখিলের বাসিন্দা জুবায়ের নামে এক রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাকে নিতে নোয়াখালী থেকে গত রোববার সকালে ভাড়ায়চালিত একটি প্রাইভেটকার হাসপাতালে আসে। ওই গাড়িতে চালক জাকির, তার সহকারী মিজান এবং গাড়ির মালিক সৌরভও ঢাকায় আসেন। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ওসি মো. গোলাম ফারুম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সংবাদে দুপুরে বেজমেন্টে থাকা একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে চালক জাকির ও মিজানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর আসল তথ্য বের হয়ে আসবে বলে আশা করছি।
ওসি বলেন, হাসপাতালের বেজমেন্টের পার্কিংয়ে প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে গাড়িটি ছিল। নিহত দুজনও ওই গাড়ির ভেতরেই ছিল। প্রচ- গরমে তাদের মরদেহ অনেকটা পচে গেছে। তবে কেন তাদের মৃত্যু হয়েছে, কোনো বিষক্রিয়া জাতীয় কিছু থেকে, নাকি হত্যা করা হয়েছেÑ এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম রূপালী বাংলাদেশকে জানান, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগী জুবায়েরকে নিতে তারা ঢাকায় আসেন। রোববার সকালে হাসপাতালের সামনে প্রাইভেটকার থেকে নামেন গাড়ির মালিক সৌরভ ও নিহত মিজান। পরে তারা হাসপাতালের রিসিপশনে যান। গাড়িটি নিয়ে চালক জাকির ভোর সকাল ৫টা ৩২ মিনিটে বেজমেন্টের পার্কিংয়ের যান। পরে চালকের সহকারী মিজান ৬টা ১০ মিনিটে বেজমেন্টে থাকা গাড়িতে গিয়ে বসেন। এরপর থেকে তারা আর গাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ডিসি মাসুদ আলম আরও বলেন, গাড়ির মালিক সৌরভ জানিয়েছেন, তিনি হাসপাতাল থেকে উত্তরায় একটি কাজে চলে যান। এদিকে তারা বেশি সকালে চলে আসায় রোগী জুবায়েরের সঙ্গে তাদের আর যোগাযোগ হয়নি। পরে সকাল ৯টার দিকে জুবায়ের গাড়ির মালিক সৌরভকে জানান, তার অপারেশন হওয়ায় আরও দুই দিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তাই তিনি চালক জাকিরকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। বেজমেন্টের ইন্টারনেট দুর্বল থাকায় হয়তো ফোন যাচ্ছিল না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন সৌরভ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগী জুরায়েরসহ তারা সবাই নোয়াখালী চাটখিলের বাসিন্দা। তবে, কেন তারা মারা গিয়েছেন বা তাদের কেউ হত্যা করেছে কি না? এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গাড়ির ভেতরে দুজন কখন, কীভাবে মারা গেলেন, গাড়িটি কে বা কারা সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হাসপাতালে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।