ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫

মাদকের সংঘাতে ফের রক্তাক্ত জেনেভা ক্যাম্প, নিহত ১

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৫, ১২:২৩ এএম

মাদকের সংঘাতে ফের রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্প। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদক কারবারিদের দুই পক্ষ আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে মোহাম্মদপুর ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিবর্ষণ আর ককটেল বিস্ফোরণে শাহ আলম নামে এক কিশোর নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকের স্পট দখলে নিতে গত কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা ৫ দিন থেমে থেমে চলছে ভয়াবহ এ সংঘর্ষ। মাদক ব্যবসায়ীদের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে অন্তত ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের তথ্য জানিয়েছে ক্যাম্পের বাসিন্দারা। ভয়াবহ সংঘর্ষের নেপথ্যে ‘শান্তি বাহিনী’ নামক জেনেভা ক্যাম্পের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী জড়িত বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।


স্থানীয়দের অভিযোগ, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ায় নতুন করে এ সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় শীর্ষ এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সব মামলায় জামিন বাতিল চেয়েছেন বাসিন্দারা। থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় শীর্ষ এসব মাদক ব্যবসায়ী সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়।


জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে কয়েক দফায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল ও শান্তি বাহিনী মিলে নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর হামলা করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা ৫ দিন ধরে সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আহত হলেও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও শান্তিবাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে এদের মধ্যে গুরুতর আহতরা হলেনÑ বশির বাবুর্চি (৪০), মদিনা (২০) ও ফায়জান (২৫)। ‎ এ ঘটনার দুদিন পর গত রোববার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেনেভা ক্যাম্পের ৮ নম্বর সেক্টর এলাকায় তিন দফায় তিনটি ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে বুনিয়া সোহেল ও তার সহযোগীরা। এতে এলাকার অনেক দোকানের ক্ষয়ক্ষতি ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আহত হয় মানসিক ভারসাম্যহীন মদিনা বেগম নামে এক নারী। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। 


জানা গেছে, বুনিয়া সোহেল আগে থেকেই ৭ নম্বর সেক্টরের হুমায়ুন রোড এলাকায় হেরোইন বিক্রি করে। এখানে নতুন করে পিচ্চি রাজা ও মনু মিয়ার নেতৃত্বে ইমতিয়াজ হেরোইন ব্যবসা শুরু করে। এ হিরোইনের স্পট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বুনিয়া সোহেল গ্রুপ।


জেনেভা ক্যাম্প বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল ও বেজি নাদিম মিলে জেনেভা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী বাহিনী শান্তি বাহিনীকে ভাড়া করে। শান্তি বাহিনীর প্রধান শাহনেওয়াজ সান্নুর নেতৃত্বে পিচ্চি রাজার মাদকের স্পট দখলে নিতে প্রথমে ককটেল বিস্ফোরণ করে হামলা চালায়। এ সময় শান্তিবাহিনীর সঙ্গে বুনিয়া সোহেলকে পিস্তল উঁচিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়তে দেখেছেন বাসিন্দারা। পুরো জেনেভা ক্যাম্পের মাদকের আধিপত্য দখল করতে বুনিয়া সোহেলের সঙ্গে বেজি নাদিম, পোপলা মুন্না, চুয়া সেলিম, খুল্লা সাহিদ ও দোগলা আজম যোগ দিয়েছেন। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত জেনেভা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষক বলেন, সোমবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে দুই পক্ষ। কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। এর আগে রোববার রাতে ককটেল বিস্ফোরণে এক নারী আহত হন জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলে সব ঠান্ডা থাকে। তারা চলে যাওয়ার পর আবারও সংঘাতে জড়ায় মাদক কারবারিরা।


জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেলের নামে অন্তত ৩০টি মামলা রয়েছে। বুনিয়া সোহেল জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের আব্দুস সালামের ছেলে। বুনিয়া সোহেল ছাড়াও, পোপলা মুন্না, বেজি নাদিম, চুয়া সেলিম, খুল্লা সাহিদ ও দোগলা আজমের নামে একাধিক মাদক ও হত্যা মামলা রয়েছে। আরেক মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি রাজার নামে মাদক ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোতোয়ালি এলাকা থেকে বুনিয়া সোহেলকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। এর কয়েক মাস পরেই জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায় এই শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী। জেল থেকে বের হয়ে আবারও তার লোকজন দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। চলতি বছরের ৪ জুন রাতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব-২ যৌথভাবে একটি ফার্মেসি থেকে বুনিয়া সোহেলের মাদক বিক্রির কয়েক কোটি টাকা জব্দ করে।


এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা নিয়মিত তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করছি। এরপরও তারা জামিনে এসে তাদের ব্যবসা দখলে নিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা খুব শীঘ্রই আবারও তাদের গ্রেপ্তার করব।


সংঘর্ষে নিহতের বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি জুয়েল বলেন, ধারালো অস্ত্রের কোপে শাহ আলম নামের একজন মারা গেছে। এ ঘটনায় ফয়সাল নামের একজনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে তারা জামিনে এসে আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সোমবারও অভিযান চালিয়ে ফয়সাল ও সেলিম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।