ঢাকা শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

একই পরিবারের ৪ মরদেহ উদ্ধার

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

‘মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’ মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখে গেলেন মিনারুল 

রাজশাহীতে একই ঘর থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের কোনো একসময় তাদের মৃত্যু হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। চিরকুটে ঋণের দায়ে ও খাওয়ার অভাবে আত্মহত্যার কথা লেখা ছিল। এ ঘটনায় এলাকায় মৃতদের স্বজনের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। 

মৃতরা হলেনÑ মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলা (৪)। তাদের বাড়ি পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় গ্রামে।

বামনশিকড় পবা উপজেলায় হলেও এলাকাটি পড়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মতিহার থানায়। মতিহার থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আলামত সংগ্রহ করে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে স্ত্রী-সন্তানদের শ্বাসরোধে হত্যার পর মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তকালে তাদের বাড়ি থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ ধারণা করছে, চিরকুটটি মিনারুলের লেখা। চিরকুটে ঋণের দায়ে ও খাওয়ার অভাবে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যার কথা লেখা আছে।

চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, ‘আমি মিনারুল নিচের যেসব লেখা লেখব, সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।’ 

চিরকুটে আরও লেখা আছে, ‘আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চারজনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।’ 

চিরকুটের অপর পাতায় লেখা আছে, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমরা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভালো হলো। কারো কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্য কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছেন, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।’

সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্ত্রী এবং মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। ছেলেকেও শ্বাসরোধ করে হত্যার মতো মনে হচ্ছে। মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। আরও তদন্তের পর আমরা প্রকৃত কারণটা জানতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে, সেটা ময়নাতদন্তের পরই নিশ্চিত করে বলা যাবে। আত্মীয়-স্বজনেরা পুলিশকে বলেছেন, চিরকুটের লেখাটা মিনারুলেরই। সেখানে আর্থিক সমস্যার কথা উঠে এসেছে। আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করব।’