ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

অমানবিক স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে মানবিক সংস্থা

স্বপ্না চক্রবর্তী
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০১:০০ এএম
  • চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে তিন সদস্যের সিন্ডিকেট
  • দুর্নীতির মূল হোতা পিএস-১ সোহাগ মিয়া, উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ ও স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক শাহানা জাফর
  • বিধি ভঙ্গ করে বয়স বাড়িয়ে উপ-মহাসচিব হন সুলতান আহমেদ
  • দুর্নীতির অভিযোগে বদলি হন শাহানা জাফর
  • নিয়োগবাণিজ্য থেকে শুরু করে নারী কেলেঙ্কারি বাদ নেই কিছুই
  • শাস্তি পাওয়া অপরাধীরা সেজেছে ভিকটিম
  • আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন

#### দেশ একটি নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আশা করব, এসব দুষ্কৃতকারীরা এ সময়েই শাস্তির আওতায় আসবে। যা পরবর্তী সময়ে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে : ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি

মানবিক ও সামাজিক উন্নয়নে দেশব্যাপী কর্মকা-ের জন্য পরিচিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। গণমানুষকে সেবা দিয়ে আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে সব ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতি। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে নারী কেলেঙ্কারি; সাম্প্রতিক সময়ে এখানে সবই ঘটছে। এসব কর্মকা-ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার প্রশ্রয় রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংস্কারের পরিবর্তে আগের সেই দলীয়করণের পথেই হাঁটছে প্রতিষ্ঠানটির নতুন গঠিত পরিচালনা বোর্ড। নারী হেনস্তা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাদের পদোন্নতি, অনিয়ম করে নিয়োগ, ইচ্ছামতো বেতন নির্ধারণসহ সব অনিয়মেই ডুবে আছে সংস্থাটি। এমনকি, আওয়ামী লীগের আমলে শাস্তি পাওয়া দুর্নীতিবাজদেরও প্রশ্রয় দিচ্ছে সংস্থাটির নয়া বোর্ড। এসব বিষয়ে বুঝে না বুঝে সায় দিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত পিএস-১ সোহাগ মিয়া, তথ্য গোপন করে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ এবং দুর্নীতি করে বদলি হওয়া স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক শাহানা জাফরদের একটি চক্র কব্জা করে নিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামকে। তারা যেভাবে বলেন, চেয়ারম্যান সেভাবেই চলেন। চেয়ারম্যাননির্ভর প্রতিষ্ঠানটি এখন এই তিন কর্মকর্তার কব্জায়। তারা চাইলে পার পেয়ে যায় অপরাধী। এমনকি নারী নির্যাতনে অভিযোগ প্রমাণের পর শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিরও বিচার হয় না। 

নিয়মবহির্ভূত নতুন নিয়োগ

৫ আগস্টের পর বোর্ড পুনর্গঠন, চেয়ারম্যান-মহাসচিবের নিয়োগের পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে। এসব ক্ষেত্রে মানা হয়নি কোনো নিয়োগবিধি। তারা হলেন সদর দপ্তরে চেয়ারম্যানের পিএস-১ সোহাগ মিয়া, যুব ও স্বেচ্ছাসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক মুনতাসির মাহমুদ ও গাড়িচালক খান এনামুল সুলতান। রক্ত কেন্দ্রে দুইজন অভ্যর্থনা কর্মী সীমা সাহানা রাকা ও আব্দুল্লাহ আল সাকিব নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সহকারী এস কে সালাউদ্দিনকে পদোন্নতি দিয়ে অফিসার করে বেতন ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বছরে ইনক্রিমেন্ট হয় মূল বেতনের ৫ শতাংশ।

এর মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আবেদনকারীদের বিবেচনা করা হয়নি। হয়নি কোনো বাছাই বা পরীক্ষা। এর বাইরে গিয়ে অবসরে চলে যাওয়া দুজন কর্মকর্তা পরিচালককে ফের একই পদে বসানো হয়েছে। তারা হলেনÑ এ এইচ এম মইনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমানের স্ত্রী রাজিয়া সুলনাতা লুনা ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বোর্ডের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী। তার ভাই পলাতক ডিআইজি হাফিজ আখতার।

দুই নারী কেলেঙ্কারিতেই উল্টো ফেঁসেছেন ভুক্তভোগী

প্রতিষ্ঠানটিতে আওয়ামী লীগের আমলে ২০২৩ সালে নারী নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত উপ-সহকারী পরিচালক মইন উদ্দিন মঈনকে পদাবনতি করে ফিল্ড অফিসার পদে টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি, তাকে এই শাস্তি থেকে বাঁচাতে এবং পদোন্নতি দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসতে কাজ করছে চক্রটি। পাশাপাশি উপ-পরিচালক সাদ মো. জহিরের নামে অভিযোগ করায় আরেক নারী সহকর্মীকে ফাঁসাতে মরিয়া তারা। এমনকি বাড়াবাড়ি করলে ভিকটিমকে উল্টো বদলি করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন শাহানা জাফর।

চেয়ারম্যানের পিএস নিয়োগে যত স্বেচ্ছাচারিতা

চেয়ারম্যান তার একজন লোক নিয়োগ দেবেন। সেজন্য প্রথমে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে প্রস্তাবনার ভিত্তিতে অনুমোদন করান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্য। পরে সে সিদ্ধান্ত পাল্টে একই কাগজে আলাদা লিখে নোট দেন পিএস-১ হিসেবে নিয়োগের জন্য, যার বেতন ধরা হয় ৩০ হাজার টাকা। যেটি রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া হবে। একই নোটে আবার পরিবর্তন করে বেতন ৫০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু নিয়োগের তিন দিনের মাথায় তার বেতন করা হয় ৬৭ হাজার টাকা। কেন, কীভাবে, কোন আইনের ভিত্তিতে করা হলো, সেটির উল্লেখ নেই। এমনকি এগুলো বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নিয়োগ ও বাছাই বিধির পরিপন্থি।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, সোহাগ মিয়া একটি ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রতিনিধি। সে সুবাদে বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. আজিজুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় ও সখ্য গড়ে ওঠে। এমনকি তিনি তার প্রাইভেট চেম্বারে সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর তাকে এখানে নিয়োগ দিতেই যত অনিয়মে জড়ান অধ্যাপক আজিজ।

অফিস না করেই বেতন নেন ডিডি মুনতাসির

৫ আগস্টের পর ছাত্র আন্দোলনের নবগঠিত বোর্ড সদস্য তুহিন ফারাবির লোক হিসেবে পরিচিত মুনতাসির মাহমুদকে যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের উপ-পরিচালক পদে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে মন চাইলে অফিস করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডিজিটাল হাজিরা থাকলেও তার নেই। তিনি প্রয়োজন মনে করলে অফিস করেন, না হয় আসেন না।

আশ্রিত আওয়ামী দোসররা

নতুন বোর্ড গঠন, নানাবিধ নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ, ইচ্ছে মাফিক বদলিতে বাধা দেন কয়েকজন কর্মকর্তা। নতুন চক্রটি তাদের কোণঠাসা করার জন্য বদলিসহ এমন কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে নাই, যা করা সম্ভব হয়নি। অধিকন্তু আওয়ামী লীগের দোসর বা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। কারণ, তারা তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বাধা হচ্ছেন না। ইতোমধ্যে ৫ উপ-পরিচালককে পদোন্নতি দিয়ে পরিচালক করা হয়েছে। তারমধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগের। এরা হলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ রেড ক্রিসেন্ট শাখার সদস্য রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের জন্য প্রকাশ্যে ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়া এ এস এম আক্তার, আওয়ামী সমর্থক সাবিনা ইয়াসমিন। এর বাইরে ২৮ জন কর্মচারীকে কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। অনেকের নাম বঙ্গবন্ধু পরিষদের তালিকায় পাওয়া গেছে। এরা হলেনÑ ইসরাত জাহান পুষ্প, ফাতেমা খাতুন, বিলকিস পারভীন, ইসরাফিল তালুকদার, হুমায়ুন কবির, রাবেয়া আক্তার লিপি, তাহমিনা আহমেদ ও হায়দার আলী।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক আরিফা মেহরা সিনহা ২০২৪ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে চাকরি করা এই কর্মকর্তা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ৬ মাসে ১২০ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। যেখানে সংস্থাটির নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা সাধারণ ও অসুস্থতাজনিত ছুটি ছাড়া অর্জিত ছুটি পান না। এ বিষয়ে রেড ক্রিসেন্ট চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও তিনি মানেননি। বরং চেয়ারম্যান ম্যানেজ করে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নেন।

আওয়ামী সমর্থক ফিল্ড অফিসার কাজী আসাদকে এই চক্র পাবনা থেকে ঢাকায় বদলি করে পুরষ্কৃৃত করেছেন। তার স্ত্রী মনিরা বেগমকে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের জুনিয়র অফিসার থেকে পদোন্নতিসহ স্থায়ী করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যেটি সামনে বোর্ডে উপস্থাপন হবে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থায়ীকরণ বিশেষ আদেশে স্থগিত রাখা হয়েছে।

উপমহাসচিবের নিয়োগে যত অনিয়ম

উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ তার নিয়োগের সময় তথ্য গোপন করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া বয়সের চেয়ে তার বয়স কম ছিল। ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপ-মহাসচিবের বয়স চাওয়া হয়েছিল ৭ আগস্ট ২০২২ এর মধ্যে ৫০ বছর বা তদূর্ধ্ব। কিন্তু তার বয়স ৫০ এর কম ছিল। তিনি সেটি গোপন করেন। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া আবেদনের সময়সীমার (৭ আগস্ট ২০২২) মধ্যে তিনি আবেদন করেননি। ডেডলাইন পার হওয়ার পর (২৩ আগস্ট) আবেদন করেও নিয়মতান্ত্রিক আবেদনকারীদের পেছনে ফেলে নিজের নিয়োগ নিশ্চিত করেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি এ টি এম আব্দুল ওয়াহহাব ও তার ব্যক্তিগত সহকারী খন্দকার এনায়েতুল্লাহ একরাম পলাশের যোগসাজশে নিয়োগ পান। সুলতান বর্তমানে রেড ক্রিসেন্ট নিয়ন্ত্রক চক্রের নেতৃত্ব দেন।

দুর্নীতিবাজ পরিচালককে স্বাস্থ্য বিভাগে পদায়ন

স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. শাহানা জাফর আওয়ামী লীগের আমলেই দুর্নীতির দায়ে বদলি হন তহবিল সংগ্রহ বিভাগে। অথচ নতুন সরকার আসলেও তিনি ভিকটিম সাজেন এবং পরিচালক (স্বাস্থ্য বিভাগ) পদে ফিরে আসেন। তিনিও বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ চক্রের সদস্য। তিনি জুলাইয়ের এক তারিখে স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ডা. নাজমুস সাকিবের চুক্তির মেয়াদ বাড়াননি। নিয়ম অনুযায়ী, চুক্তির মেয়াদ না বাড়ালেও এক মাস আগে বলতে হয়। কিন্তু সেটি অমান্য করে তাকে তাৎক্ষণিক বের করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টে রীতি অনুযায়ী, প্রকল্পের ফান্ড থাকলে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

যা বলছেন অভিযুক্তরা

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক শাহানা জাফর রূপালী বাংলাদেশের প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। তবে গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ৫ আগস্টের আগে তিনি নিজেই ভিকটিম ছিলেন। তাকে এতদিন অন্যায়ভাবে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন পট পরিবর্তনের পর তিনি স্বপদে ফিরেছেন। 

একইভাবে অভিযোগের বিষয়ে উপমহাসচিব সুলতান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কত ইতিবাচক নিউজ আছে। আমাদের কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করে, বিনিময়ে অল্প কিছু সম্মানী দেই। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। তাদের পরিশ্রমের চিত্র দেখলে কষ্ট লাগে। অথচ আপনারা এগুলো নিয়ে রিপোর্ট করেন না। শুধুই নেতিবাচক নিয়ে আছেন। এটা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।

তবে বহুবার চেষ্টা করেও সোহাগ মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পাল্টা প্রতিবেদককে হোয়াটসএ্যাপে ভিজিটিং কার্ড পাঠাতে বলেন। ভিজিটিং কার্ডের ছবি পাঠানো হলেও তার বা তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রশ্নের উত্তর প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে তিনি দেননি। 
চেয়ারম্যানের বক্তব্য

এসব বিষয় নিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিলে প্রথমে তিনি চেম্বারে আছেন বলে সময় চান। পরবর্তীতে পিএস সোহাগকে দিয়ে ফোন করালেও নিজে আর ফোন রিসিভ করেননি। তবে গণমাধ্যমের কাছে তিনি এসব অভিযোগের কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, এখানে কিছু বিষয়ে ব্যত্যয় আছে। আমি আসার পর নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছি। নানা অভিযোগও পেয়েছি। স্বচ্ছতার জন্য আমি বিষয়টি দুদককে দিয়ে দিয়েছি। তারা তদন্ত করে দেখুক। এই সরকারের আমলেই সব দুর্নীতিবাজের শাস্তি চান বিশেষজ্ঞরা

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেই আমরা চিনি উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ১৯৭৩ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সূচনা হয়, যা একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের স্বীকৃতি পায়। ২ নভেম্বর ১৯৭৩ তারিখে এই সোসাইটি রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত হয়।

আমরা দেখেছি, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বাস্তু ও স্বজনহারা মানুষদের সহায়তায় বিশাল আকারের উদ্ধারকাজ শুরু করে। ২০০৬ সালে আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসে আইসিআরসি এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি হেডকোয়ার্টার চুক্তি স্বাক্ষর করে এর মিশনকে প্রতিনিধিত্বে রূপান্তরিত করে। তখন থেকে আইসিআরসি নিয়মিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দুস্থ মানুষদের যেকোনো প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু গত বছর প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম হয়েছে এটা আমরাও জানি। গণঅভ্যুত্থানের পর এই সময়টায় কারো একক স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। এটা কখনো আমাদের কাম্য নয়। পূর্বের সরকারের সময় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু এখন যেহেতু দেশ একটি নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সেহেতু আমরা আশা করব, এসব দুষ্কৃতকারীরা এ সময়েই শাস্তির আওতায় আসবে। যা পরবর্তী সময়ে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।