বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে পাকিস্তান হাইকমিশনে প্রথমে এনসিপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর জামায়াতে ইসলামী এবং সন্ধ্যায় বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসহাক দার।
বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাত আটটার দিকে বৈঠকটি শেষ হয়েছে বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। বিএনপির প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
এদিকে ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে তাঁর বাসভবন ফিরোজায় যাবেন। আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবনে তাঁর যাওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে এ তথ্য জানান দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দুই দেশের সরকারের বিষয়: জামায়াত নেতা এর আগে, বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসহাক দার। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বৈঠক শেষে তাহের সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক এবং বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে তাহের আরও বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছিল একপেশে। আমরা মনে করি, সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক থাকা দরকার। তার ব্যাপারে বৈঠকে দুই পক্ষের তরফেই জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়ে আমরা বলেছিÑ সারা বিশ্বে যেসব সমস্যা হচ্ছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের সমস্যা, এসব বিষয়ে যেন মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়, সেই আলোচনাও আমরা করেছি। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো রয়েছে, তা দুই দেশের সরকারের বিষয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ৭১ ইস্যুকে ‘ডিল’ করা উচিত: এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অতীতের বৈরী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একাত্তরের ইস্যু পাকিস্তানের ‘ডিল’ করা উচিত বলে বলেছে দলটি। গতকাল বিকেলে পাকিস্তান হাইকমিশনে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানেই এসব কথা বলা হয় বলে জানান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
বৈঠক শেষে এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের যে ধারণা, সেটা তাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এনসিপি মনে কওে, বিগত সময়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণের যে পারসেপশন, সেটাকে আমাদের সবচেয়ে সেনসিটিভ আকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, যেকোনো ধরনের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ’৭১ ইস্যুকে অবশ্যই ডিল করা উচিত। আমরা সে প্রসঙ্গ তাদের কাছে উত্থাপন করেছি।
’৭১-এর অমীমাংসিত তিন ইস্যু সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। এ নিয়ে ইসহাক দার কিছু বলেছেন কি না, জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, বিষয়টি পাকিস্তান জানাবে। একই বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, ৭১ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। তারা বলেছে, তারা এটাতে প্রস্তুত।’
গতকাল দুপুরে তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। সফরকালে ইসহাক দারের বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে।