ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাবি প্রশাসন। ইতিমধ্যে ছাত্রদলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, ডাকসুকে সামনে রেখে প্রশাসন যে আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, সেটি অনেক প্রার্থী ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, অনলাইনে-অফলাইনে ভঙ্গ করে চলেছে। এখনো মিছিলের সময় শুরু না হলেও অনেকে মিছিল করছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চার সদস্যবিশিষ্ট স্বতন্ত্রের আংশিক প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক পদপ্রার্থী এবি জুবায়ের।
বাম ধারার সাত সংগঠনের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদ নির্বাচনের আগে-পরে এক সপ্তাহে সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হল সংসদের নির্বাচনে দুটি সম্পাদকীয় পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন দুই প্রার্থী। তাদের একজন রেহেনা আক্তার, অন্যজন লামিয়া আক্তার (লিমা)। তারা দুজনই বহিরঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করার জন্য দুটি হল সংসদে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন ঘিরে সাইবার জগতে নারী প্রার্থীদের সুরক্ষায় ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এবি যুবাইর বলেন, আমরা চাই আসন্ন ডাকসু নির্বাচন হবে সবার অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর পরিবেশে। এই নির্বাচন হোক ভোটারবান্ধব, শিক্ষার্থীবান্ধব। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার্থী ভাইয়েরা কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া যেন তাদের ভোট দিতে পারে। এ জায়গা থেকে আমাদের বেশ কিছু উদ্বেগের জায়গা আছে। অনেকগুলো ভোটকেন্দ্র হল থেকে দূরে অবস্থিত। যে কারণে অনেকের মধ্যে ভোট দিতে অনীহা সৃষ্টি হতে পারে, অনেকের ভোটকেন্দ্রে পৌঁছতে কষ্ট হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ডাকসুকে সামনে রেখে প্রশাসন যে আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে, সেটি অনেক প্রার্থী ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, অনলাইনে-অফলাইনে ভঙ্গ করে চলেছে। এখনো মিছিলের সময় শুরু না হলেও অনেকে মিছিল করছে। আমরা মনে করি, যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তাদের ওপর আমরা কীভাবে ভরসা রাখব? সামনে ভোটের সময় যদি কারচুপি হয়, অন্যায় কিছু হয়, তাহলে যে প্রশাসন এখন ব্যবস্থা নিতে পারছে না, তারা তখন কীভাবে ব্যবস্থা নেবে? এতে আমাদের আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধে তিনটি ফেসবুক গ্রুপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১’ এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ নামক গ্রুপগুলোর কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের ক্যাম্পাসে পরিচালিত সেবা কার্যক্রম নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারেÑ এই যুক্তিতে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের সব কার্যক্রম এবং শাটল সার্ভিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
নির্বাচনি আচরণবিধি অনুসরণে প্রশাসন জানিয়েছে, প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের টাঙানো সব ব্যানার ও বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। উপঢৌকন বিলি, অর্থ সহযোগিতা, আপ্যায়ন বা সেবামূলক কর্মকা- সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এগুলো আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রচারণা শুরু হবে ২৬ আগস্ট এবং চলবে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত। তবে এই সময়েও সামাজিক বা আর্থিক সহায়তা, ধর্মীয় স্থানে প্রচারণা কিংবা মাহফিল আয়োজন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আচরণবিধির ধারা-১৭ অনুযায়ী এসব কর্মকা- শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নির্বাচন ঘিরে সাইবার জগতে নারী প্রার্থীদের সুরক্ষায় ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠনের দাবি জানিয়েছে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। তারা আট দাবি সংবলিত স্মারকলিপি জমা দেয়। এ সময় স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আল সাদী ভূইয়াসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের আগে-পরে এক সপ্তাহ সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছে বাম ধারার সাত সংগঠনের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদ। প্রতিরোধ পর্ষদের তরফে বলা হয়, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বা পরপরই পরীক্ষা থাকায় অনেকের নির্বাচনি কর্মকা- ‘ব্যাহত’ হচ্ছে। সে কারণে ৫ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের সব পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে শুধু ক্লাস চালু রাখার পক্ষে তারা। প্রতিরোধ পর্ষদ মনে করছে, এর ফলে প্রার্থীরা পড়াশোনা ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য হবেন না। ভোটাররা যথাযথভাবে প্রার্থীদের যাচাই-বাছাইয়ের সময় পাবেন।
এদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হল সংসদের নির্বাচনে দুটি সম্পাদকীয় পদে ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন দুই প্রার্থী। তাঁদের একজন রেহেনা আক্তার, অন্যজন লামিয়া আক্তার (লিমা)। তাঁরা দুজনই বহিরঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করার জন্য দুটি হল সংসদে প্রার্থী হয়েছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন রেহেনা। অন্যদিকে শামসুন নাহার হল সংসদের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী লামিয়া। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন ২১ আগস্ট প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, শামসুন নাহার ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদে বহিরঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক পদে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।
তপশিল অনুযায়ী, ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। তার আগে আজ সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন