এক প্রার্থীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির ঘটনা তদন্তে পৃথক কমিটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিশন। হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাবির বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
এদিকে ডাকসু ভোটের আচরণবিধি-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুই সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন টাস্কফোর্সের প্রধান অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন নারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটা তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছি। আমরা তিন কর্মদিবসের মধ্যে এ তথ্য অনুসন্ধান কমিটিকে অনুরোধ করেছি, তদন্ত করে আমাদের কাছে লিখিতভাবে রিপোর্ট প্রদান করার জন্য।’ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মোস্তাক গাউসুল হককে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি সদস্য সহকারী প্রক্টর জাহাঙ্গীর আলম। ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা করার পর ওই প্রার্থী এ হুমকি পান।
এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। ৫ আগস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন, এরপরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী হলেনÑ এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয় রিট আবেদনে।
গত সোমবার তার রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে এবং আদেশের ১৫ দিনের মধ্যে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালকে। ওই আদেশের পর শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করায় নির্বাচনের ‘বাধা’ কেটে যায়। ফাহমিদাকে নিয়ে গত সোমবার বিকেলে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আলী হুসেন।
ওই প্রার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ‘অন্যের ওপর দায় না চাপিয়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’র কথা বলেছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কও।
এদিকে, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনকারী ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেত্রীদের হেনস্তা ও নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদেও ছাত্রদল বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা টিএসসিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলি অঙ্গীকার’, ‘আলী হোসেনের ছাত্রত্ব, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘নিপীড়কের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ বলে সেøাগান দেন। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও হল শাখা ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে রোকেয়া হলের আহ্বায়ক শ্রাবণী আক্তার বলেন, ‘রাজনীতিতে, সামাজিক কার্যকলাপে আমাদের কম অংশগ্রহণের পেছনে আমাদের ভাইয়েরা দায়ী। ডাকসুর মতো একটি নির্বাচনে মাত্র ৩০ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ করছেন। সেটি কেন?’ এ সময় তিনি নারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক বীথি হাসান বলেন, ‘আমরা যখন কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করি, তখন আমাদের হেনস্তা করা হয়। আমাদের নিয়ে সাইবার বুলিং করা হয়। আমাদের গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আমাদের সব সময় আটকে রাখতে চায়।’
ওই ছাত্রীকে হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থী আলী হোসেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আলী হোসেন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।’ আলী হোসেনের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান, ডাকসুর ভিপি প্রার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা আবদুল কাদের। তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘রিটকারী নারী প্রার্থীকে লিগ্যালি এবং পলিটিক্যালি ডিল না করে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতে দেওয়া হবে না।’
ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাবির বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক নারী শিক্ষার্থীকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন