ঢাকা সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

টাঙ্গাইলে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুরপাড়ার নিজ বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কাদের সিদ্দিকীর দুটি গাড়ি ও বাড়ির জানালা ভাঙচুর করা হয়। হামলার সময় কাদের সিদ্দিকী নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

কাদের সিদ্দিকীর বাড়ির কর্মচারীরা বলেন, শনিবার মধ্যরাতে ১০ থেকে ১৫ জনের মুখোশধারী একটি দল হেলমেট পরা অবস্থায় বাড়ির সামনে আসে। বাড়ির মূল ফটক বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকজন মই দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্র ছিল। প্রথমে তারা বাড়ির জেনারেটরের ভেতর থেকে অকটেন তেল বের করে এবং তারা সঙ্গে কিছু তেলও নিয়ে এসেছিল। পরে কাদের সিদ্দিকীর দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। বিষয়টি বাড়ির লোকজন টের পেয়ে চিৎকার করলে মই দিয়ে তারা বাড়ির বাইরে বের হয়ে যায়। পরে তারা বাইরে থেকে বাড়িতে ইট নিক্ষেপ করে। এতে বাড়ির জানালা ভেঙে যায়।

গাড়িচালক মো. লিটন বলেন, গেট বন্ধ থাকায় তিনজন মুখোশধারী মই দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা পেট্রোল ব্যবহার করে গাড়িগুলো পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। বাইরে যারা ছিল, তারা প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

এ ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার বাসা যদি ভেঙে দেশে শান্তি আসে, আমি সেটার পক্ষে। আমি কাউকে দোষারোপ করছি না, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তার ছোট ভাই শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকীসহ মুক্তিযোদ্ধারা।

এ সময় তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আমরা এই স্বৈরাচারী মনোভাব আশা করি নাই। আওয়ামী লীগ যদি স্বৈরাচারী হয়, তাহলে আজকের অ্যাক্টিভিটিকে (কর্মকা-) আমরা কী বলে অভিহিত করব?’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘২৬ বছর হয় নতুন দল করেছি। রাত-দিন সংগ্রাম করেছি। আওয়ামী লীগ আমাদের বহু প্রোগ্রাম করতে দেয় নাই। তার পরও যদি সবাইকে আওয়ামী লীগের দোসর বানানো হয়; তাহলে তো আমি মনে করব, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ব্যর্থ করার জন্য, ধ্বংস করার জন্য এ কোনো ষড়যন্ত্র কি না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছি না। প্রায় ২৬ বছর আগে আমি আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রতিষ্ঠা করেছি। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের জনগণকে আমি ভালোবাসি ও সম্মান করি।’

বঙ্গবীর বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, দেশটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ খুঁজছে। সেই সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকার দিচ্ছে কি না, আমি ঠিক বলতে পারব না।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার মতো মানুষ, যাকে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক খেতাব দিয়েছে, তার বাড়ি যদি নিরাপদ না থাকে, আমার সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের বাড়ি নিরাপদ কীভাবে হয়?

কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মঞ্চ ৭১-এর সভায় আমাদের নেতা, আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী আলোচক হিসেবে গিয়েছিলেন। তাদের সব আলোচককে গ্রেপ্তার করেছে। যারা শ্রোতা হিসেবে গিয়েছিল, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে; কিন্তু যারা মব সৃষ্টি করেছে, যারা বাধা দিয়েছে, তাদের কিছু বলা হয় নাই। এটা একটা ন্যায়-নীতির ব্যত্যয়, আইনের ব্যত্যয়। এখান থেকে আমি সরকারকে সরে আসতে বলব।’

কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমার বাড়ির ওপর হামলার মধ্য দিয়েই এই চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধ করা হোক। এটা সরকারের কাছে আমার নিবেদন। দেশবাসীর কাছে আমার নিবেদন যে আপনারা জাগ্রত হোন, রুখে দাঁড়ান। এই রকম অন্যায়কে সহ্য করলে পরবর্তী বংশধরদের জীবন-সম্পদ-সম্মান সব হুমকির মধ্যে পড়বে।’

এদিকে কাদের সিদ্দিকীর বাসায় হামলার ঘটনায় টাঙ্গাইল থানার ওসি তানবীর আহাম্মেদ জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দ্রুতই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।