- মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স
- গণঅভ্যুত্থানে লুণ্ঠিত প্রায় ৮০ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার
- ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই
আগামী জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত সেনাবাহিনী। তবে এ বিষয়ে সরকার থেকে বার্তা পেলেও এখনো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পায়নি সেনাবাহিনী। তবে শিগগিরই ইসির নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সেনাসদর।
গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনার আলোকে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করবে।’ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল বলেন, ‘কমিশন থেকে আমরা অচিরেই নির্বাচনের নির্দেশনা পাব। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মাঠে কাজ করব। ইতিমধ্যে আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল শফিকুল ইসলাম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। প্রায় ৮০ শতাংশ লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। অস্ত্র উদ্ধার হলে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সহযোগিতা করবে।
মবের বিষয়ে তিনি বলেন, মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এটা বলেছি আমরা। যেখানে যখন মব হয়েছে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কয়েকটি জায়গা আমাদের দেরি হয়েছে সেটা সোর্স থেকে তথ্য পেতে বিলম্ব হওয়ায়। যেকোনো ঘটনা ঘটার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়। তারপর আমাদের অনুরোধ জানালে এর মধ্যে কিন্তু কিছু কালক্ষেপণ হয়ে গেছে, তারপর আমাদের নিকটস্থ ক্যাম্প থেকে যদি পেট্রোল পাঠায় তখনো কিছু সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে আসলে যদি কোনো ঘটনা ঘটে যায় এটার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারে না। এমন একটি উদাহরণ দেখানো যাবে না যে, আমাদের অনুরোধ করেছে আমরা যাইনি বা মব হয়েছে সেনাবাহিনী যায়নি। আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। আমরা চেষ্টা করছি সামনের দিনগুলোয় এ ধরনের ঘটনা ইনশাআল্লাহ আরও কমে আসবে।
সম্প্রতি টাংগাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাসায় হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই এই দেশটির জন্ম। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান সবসময়ই রাখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। কোনো মব সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা যাবে না। মব সহিংসতা দমনে সেনাবাহিনী কাজ করছে। সামনে কেউ মব সৃষ্টি করলে সেনাবাহিনী কঠোর হবে।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অনেক সেনাকর্মকর্তা প্রচারণা চালাচ্ছে এ বিষয়টি সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছেÑ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ও অনাকাক্সিক্ষত। আপনারা বুঝতে পেরেছেন কে কি উদ্দেশ্যে এসব প্রপাগান্ডা ও মিস-ইনফরমেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে। আপনারা ভালো বুঝেন, আপনাদের দায়িত্ব দিলাম কে কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে।
গুম কমিশন নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান কি এবং গুম কমিশনকে সেনাবাহিনী কীভাবে সহযোগিতা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুম কমিশন নিয়ে যে গুজব সেটা আসলে গুজব। কেননা গুম কমিশনের তদন্তের জন্য আমাদের যাদের ডাকা হয়েছে সবাই গুম কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এখনো সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করে যাবে।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এইটা বন্ধ করতে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না এবং আগামীকালের (আজ) ভোটে যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কি ভূমিকা রাখবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ডাকসুর নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর আগেও আমরা আইএসপিআরের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বলেছি, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবুও কিছু স্বার্থানেষী মহল প্রপাগান্ডা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এই প্রপাগান্ডা করে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। এই নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করছে আমরা সবার মঙ্গল কামনা করি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুস্থ পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চা আমরা এইটা চই এবং নির্বাচনের চর্চা হোক আমরা এইটাই চাই।
সীমান্তে আরাকান আর্মির উৎপাত ও চোরাচালানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সীমান্তে যে সংস্থাগুলো নিয়ে কাজ করে তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। তারা এ বিষয়ে সজাগ ও সোচ্চার আছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে পরিস্থিতি অবনতি হলে সকলে সম্মিলিতভাবে ট্যাকেল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্ষতিয়ে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।