জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ের হত্যা মামলাগুলোর বিচার ত্বরান্বিত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে একটি তদারক কমিটি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আইন ও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের এ কমিটিকে নিয়মিত অগ্রগতির তথ্য ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে জানানোর পাশাপাশি ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিম্নে নয়), বাংলাদেশ পুলিশের একজন প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিম্নে নয়), জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন মনোনীত শহিদ পরিবারের একজন সদস্য, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় মনোনীত একজন মানবাধিকার কর্মী, জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন মনোনীত একজন আইনজীবী এবং আইন ও বিচার বিভাগের জিপি-পিপি অধিশাখার উপ-সলিসিটর (কমিটির সদস্য-সচিব) সদস্য হিসেবে এ কমিটিতে থাকবেন।
গতকাল সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের এক সাংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে দেশব্যাপী চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের অভিযোগে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে কিছু মামলায় সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলার (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ছাড়া) প্রসিকিউশনের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও গতিশীল করার লক্ষ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধের অভিযোগে করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংগ্রহ করবে। এ ধরনের মামলার মধ্যে যেসব মামলার চার্জশিট দাখিল হয়েছে, সেসব মামলায় (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ছাড়া) প্রসিকিউশনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করবে (যদি থাকে) এবং সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি ভুক্তভোগী পরিবার ও দেশবাসীকে সময়ে সময়ে অবহিত করবে। মামলার ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ সরকারকে পাঠাবে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন শেষমেশ সরকার উৎখাতের ইতিহাস পড়ে।
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সে সময়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর গত ২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আন্দোলনের সময় হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় সারা দেশে ১ হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ৩৪টি হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ১ হাজার ৩৯০ জন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের যে তালিকা সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে, সেখানে শহিদের সংখ্যা ৮০০ বেশি। তবে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে।