বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম

নেপালে বিক্ষোভ

সরকার পতনের পরও থমথমে পরিস্থিতি 

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম

সরকার পতনের পরও থমথমে পরিস্থিতি 

টানা দুই দিনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় সরকারের পতনের পর রাজধানী কাঠমান্ডুতে গতকাল বুধবারের সকাল কিছুটা শান্ত হলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে এখনো চাপা আতঙ্কে নেপালবাসী। সহিংসতার পাশাপাশি নেপালজুড়ে চলছে মব আতঙ্ক। পরিস্থিতি থমথমে। তবে এসবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যত দিন না নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, তত দিন দেশের শাসনভার চালাবে তারা। এ জন্য কারফিউ দিয়ে নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় আছেন কাঠমান্ডুর সিটি মেয়র বালেন্দ্র শাহসহ কয়েকজনের নাম। তবে যারা আন্দোলন-বিক্ষোভ করে সরকারের পতন ঘটালেন, সেই জেন-জিরা বলছেন, তাদের আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে গেছে। আর দুই দিন বন্ধ থাকার পর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টিআইএ) আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় চালু হয়েছে।

নেপাল জুড়ে চাপা আতঙ্ক :

বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করার পরও এখনো নেপালজুড়ে চাপা অতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জ¦ালিয়ে দেওয়া ট্রাফিক পোস্ট ও গাড়ির পোড়া ধ্বংসাবশেষ। রাস্তায় গাড়ি নেই। মানুষেরও দেখা মিলছে না। রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ভোর থেকে শহরের প্রধান মোড়গুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে ভেতরের রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সেনারা। লাউড স্পিকারে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গলি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানাচ্ছে। নেপালি সংবাদমাধ্যম ‘সেতুপতি’ জানিয়েছে, সকালে কিছু পেট্রোল পাম্প, মুদি দোকান ও প্রয়োজনীয় ব্যবসা খোলা হলেও সকাল ৯টার পর এগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। 
রাজধানীর বৌদ্ধ স্তূপার সামনে থাকা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে গতকাল সকালেও ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। হায়াত হোটেলের সামনে ভাটভাটেনি সুপারস্টোর প্রায় ১৯ ঘণ্টা ধরে জ¦লছে। সেনারা সকাল ৯টার পর সেখানে অবস্থান নিলেও স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘরছাড়া। চাবাহিল চকেও ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে। গণেশস্থান ও পশুপতি ক্যাম্পাসের প্রবেশপথ ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গউশালা চকের রাস্তায় থাকা পুলিশ সুপারের কার্যালয় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। 

সিংহ দরবার এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। পশ্চিম প্রাচীর ২০ ঘণ্টা ধরে জ¦লছে। বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় দপ্তর ধ্বংস হয়ে গেছে। নগর উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণ অধিদপ্তরও ভস্মীভূত। রাম শাহ পথে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট এখন শুধু ছাইয়ের স্তূপ। সেনা মোতায়েন ও ব্যারিকেডের মাঝে শহর যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মতো নিস্তেজ হয়ে আছে।

সেনাপ্রধানের কঠোর হুঁশিয়ারি :

বিক্ষোভ-পরবর্তী সহিংসতার পর নেপালে এখন মব আতঙ্ক চলছে। তবে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মবের নামে লুটপাট, ভাঙচুর কিংবা হামলার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে লুটপাট ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেনারেল সিগদেল সতর্ক করে বলেন, আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, লুটপাট বা সাধারণ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি সহিংসতায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং বলেন যে, নেপাল সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখ-তা ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। 

জেন-জি বিক্ষোভের সময় লুট হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সমর্পণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। জনসংযোগ ও তথ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী অনুরোধ করেছে, যাদের কাছে এ ধরনের অস্ত্র আছে, তারা যেন তাৎক্ষণিকভাবে নিকটতম নিরাপত্তা সংস্থা বা নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করে। আবেদনে জনসাধারণকে এই অস্ত্রের অপব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য দেওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বিলম্ব না করে এগুলো সমর্পণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী সতর্ক করে দিয়েছে, অননুমোদিত অস্ত্র রাখার অভিযোগে বা আদেশ অমান্য করলে যে কারও বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুসারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেনাবাহিনী ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজেন্দ্র বসনেট জানান, তারা মূলত সেই সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন, যারা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করছে। তিনি বলেন, আমরা জেন-জির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।

আন্দোলন হাইজ্যাকের অভিযোগ :

নেপালে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। কিন্তু এই প্রতিবাদ দ্রুতই গভীর রাজনৈতিক অসন্তোষে রূপ নেয়। তরুণ প্রজন্ম, যারা নিজেদের ‘জেন-জি’ বলে পরিচয় দেয়, তারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। তাদের অভিযোগ, এই প্রতিবাদকে ‘সুযোগসন্ধানীরা’ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে সহিংসতায় রূপ দিয়েছে। তারা বলছেন, তাদের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ হয়ে গেছে।

আন্দোলনকারীরা বিবিসিকে জানান, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। কিন্তু গত কয়েক দিনে সরকারি ভবন, রাজনীতিবিদদের বাড়ি এবং এমনকি সংসদ ভবনেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল এবং এখনো শান্তিপূর্ণ আছে। আমরা সহিংসতা বা ভাঙচুর সমর্থন করি না।

সেনাবাহিনী তরুণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা এখন নতুন দাবি-দাওয়ার তালিকা তৈরি করছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি হলো নেপালের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত এবং যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নির্বাচন করা।

আগামীর দিকে তাকিয়ে নেপালিরা :

এত অস্থিরতার মধ্যেও কাঠমান্ডুর রাস্তায় কিছু কিশোর-তরুণকে দেখা গেছে, যারা বিক্ষোভের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি পরিষ্কার করছে। তাদেরই একজন ১৪ বছর বয়সি কাসান লামা। সে বলে, এই দুর্নীতি অনেক দিন ধরেই নেপালে আছে। এখন পরিবর্তনের সময় এসেছে। অন্যদিকে ২৪ বছর বয়সি পরাশ প্রতাপ হামাল বলছেন, তারা প্রচুর ‘দূষণ’ তৈরি করেছেন, তাই তা পরিষ্কার করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, নেপালের স্বাধীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন। অনেকে অবশ্য সহিংসতায় বিস্মিত হয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সি রাকেশ নিরাউলা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে এমনটা হওয়া উচিত ছিল না।

অন্ধকারের মধ্যেও আশা দেখছে সাধারণ মানুষ। তারা মনে করছে, এই বিপ্লব হয়তো নেতাদের জন্য একটি শিক্ষা, যা নেপালের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে আসবে।

প্রসঙ্গত, একাধিক সামাজিক মাধ্যম অ্যাপ বন্ধ ও সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে জেন-জিদের আন্দোলন-বিক্ষোভে গত সোমবার ও মঙ্গলবার দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় নেপালে। কাঠমান্ডু থেকে বিদ্রোহের সূত্রপাত হলেও তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে নেপালজুড়ে। হাজার হাজার বিদ্রোহীর হাতে প্লাকার্ড, মুখে স্লোগান। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান তারা। আন্দোলন-বিক্ষোভের একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে গত মঙ্গলবার নেপাল সরকারের পতন হয়। তবে এখনো শান্ত হয়নি নেপালের পরিস্থিতি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!