হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর এখন হরহামেশা শোনা যাচ্ছে। হাওর যেন হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজদের স্বর্গরাজ্য। এসব দুর্নীতিতে ঠিকাদারদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত আছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে উন্নয়নের নামে হাওরের যত্রতত্র বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট করে হাওরকে ছোট ছোট পুকুরে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হাওরের মাছের উৎপাদন কমছে এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। এতে স্থানীয় অধিবাসীদের আয়-রোজগার কমছে এবং তাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিনতর হচ্ছে। একই সঙ্গে হাওরে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট হচ্ছে।
হাওরের ভূ-প্রকৃতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। হাওর অঞ্চলের সঙ্গে একটি উঁচু এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু ব্যবধান থাকবেÑ এটা মেনেই হাওরের প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। ২০১৭ সালে ব্যাপক ফসলহানির পর হাওর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিল। কিন্তু ওই সময় যেসব ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাওরে ফসলহানির জন্য দায়ি ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে এখনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলারও তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি বলেই হাওরবাসী মনে করছেন। আগে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি বলে দুর্নীতির এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে। সম্প্রতি ৫০০ কোটি টাকার হাওর রক্ষা বাঁধে দুর্নীতির খবর প্রচারিত হয়েছে। শাস্তি হিসেবে কয়েকজন কর্মকর্তাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়েছে। আমরা মনে করি, শুধু বদলি এ ধরনের অপকর্মের শাস্তি হিসেবে যথার্থ নয়। এদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় মামলা নয়, দুর্নীতি দমন কমিশনে সরকারি অর্থ অপচয় এবং হাওরের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আলাদা মামলা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
হাওর অঞ্চলের মানুষকে অধিকার বঞ্চিত করে হাওরে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ যেভাবে লোপাট হচ্ছে এর প্রতিবাদে হাওরবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সরকারকেও নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। সর্বোপরি উন্নয়নের নামে হাওরের পরিবেশ বিনষ্ট করা যাবে না। হাওরকে হাওরের মতো থাকতে দিতে হবে।
লেখক: সভাপতি, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা