সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের ৫ জেলাকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ২৪ জেলাকে ‘মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গতকাল শনিবার সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সম্প্রীতি যাত্রা। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো ঢাকা, রংপুর, যশোর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী। মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো গাজীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা। দেশের অন্য জেলাগুলো ‘নি¤œ ঝুঁকিপূর্ণ’।
২০১৪ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত পূজা ও অন্যান্য সময়ে পূজাম-প, শোভাযাত্রার রুট বা সংখ্যালঘু বাড়িঘরে হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে ঝুঁকির এই মানচিত্র তৈরি করেছে সম্প্রীতি যাত্রা।
আয়োজকেরা জানান, বিভিন্ন লেখক, সাহিত্যিক, কবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে সম্প্রীতি যাত্রা প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে। শিগগিরই দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা হবে, যারা বিভিন্ন মন্দির, মাজার, ধর্মীয় স্থাপনা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবে।
সাংস্কৃতিক কর্মী বীথি ঘোষের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল মামদূহ।
তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেটি দেখার কথা। কিন্তু নানা অভিযোগে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে। বৈষম্যহীনতার আকাক্সক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পরও এই প্রবণতার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি।’
ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে মীর হুযাইফা আল মামদূহ বলেন, ‘ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষিক ও সংস্কৃতিগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। যদি আগাম প্রস্তুতি, কার্যকর আইন প্রয়োগ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সমাজের অংশগ্রহণ একত্র করা যায়, তাহলে মন্দির, মাজার, আখড়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়েকটি পদক্ষেপের কথা জানায় সম্প্রীতি যাত্রা। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটি গঠন, মনিটরিং ও নথিভুক্তি, গুজব প্রতিরোধে তথ্যপ্রবাহ, দ্রুত সহায়তাকাঠামো এবং প্রতিবেদন ও নীতি প্রস্তাব। আয়োজকেরা জানান, সম্প্রীতি যাত্রা কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠিত কর্মসূচি নয়, বরং সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের একটি দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম শুরু হয়।
পূজার ছুটিতে বিশেষ ট্রেন ‘ট্যুরিস্ট স্পেশাল’ চলবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে:
শারদীয় দুর্গোৎসবে এবার টানা চার দিন বন্ধ থাকবে অফিস-আদালত। লম্বা এই ছুটিতে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেন চালু করছে রেলওয়ে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এসব ট্রেন চলবে। এর মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ‘ঢাকা স্পেশাল’ চলবে। চট্টগ্রাম থেকে বেলা পৌনে ৩টায় এই ট্রেন ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৮টায়। ৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম স্পেশাল ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়।
এ ছাড়া ট্যুরিস্ট স্পেশাল চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর। বিশেষ এই ট্রেন ৩০ সেপ্টেস্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে এই ট্রেন ছাড়বে বেলা সাড়ে ১১টায়। ৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন এই ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি বিশেষ ট্রেনে ১৮টি বগি থাকবে। দিনে আসন থাকবে ৮৩৪টি এবং রাতের বেলায় ৭৮৯টি। ভাড়া নিয়মিত ট্রেনের মতো।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি থাকবে। লম্বা ছুটিতে পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ বেড়ে যায়। কক্সবাজারে যাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ট্রেন। তাই যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। এসব ট্রেনে নিয়মিত আন্তনগর ট্রেনের মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। যাত্রীরা নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবে।