বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

সন্ত্রাসে কাঁপছে মিরপুর-মোহাম্মদপুর

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

সন্ত্রাসে কাঁপছে মিরপুর-মোহাম্মদপুর

  • গত বছরের ৫ আগস্টের পর নতুন করে সন্ত্রাসের রাজত্ব গড়ে উঠেছে মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে
  • এ দুই এলাকার কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা
  • রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের
  • মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে ৬০টি সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং গ্রুপ
  • মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের চার হটস্পটÑ বসিলা বেড়িবাঁধ, ঢাকা উদ্যান, জেনেভা ক্যাম্প ও টাউন হলের বিপরীত পাশের বিহারি ক্যাম্প
  • মোহাম্মদপুরকে ঐতিহ্যগতভাবে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
  • ৫ আগস্ট-পরবর্তী গত ১৩ মাসে প্রায় দেড় হাজার মামলা মোহাম্মদপুর থানায়
  • মিরপুরের সাত থানায় গত এক মাসে শতাধিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা
  • পল্লবীর বিহারি জনিসহ ডজনখানেক সন্ত্রাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলেন ফজলে রাব্বি সুমন (২৫)। এ সময় সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা তাদের পথ রোধ করে। ছিনতাইকারীরা সুমনের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিতে চাইলে বাধা দিলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা সুমনকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইলটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।  শুধু সুমনের এ ঘটনাই নয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা যেন সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারি ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।  মোহাম্মদপুরে সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও সংবাদমাধ্যমের নিত্যদিনের খবর।

শুধু মোহাম্মদপুরই নয়, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মিরপুরেও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।  জুলাইয়ের মধ্যভাগে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে একদল লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পল্লবীর আলব্দিরটেক এলাকায় এ কে বিল্ডার্স নামের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে এ হামলা চালায়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।  

রাজধানী অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও ব্যস্ততম দুই এলাকা মিরপুর ও মোহাম্মদপুর বর্তমানে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংদের দখলে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্রমতে, মোহাম্মদপুরে বেপরোয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও ইমন গ্রুপ। এর সঙ্গে রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ভাগ্নে বিল্লাল’ ইয়াসিন, শরীফ, মোশারফ হোসেন ওরফে ‘লম্বু মোশারফ’ ওরফে ‘গলাকাটা মোশারফ’, এক্সেল বাবু, চান গ্রুপের প্রধান সোহেল ওরফে কালাচানসহ অর্ধশতাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের পাশাপাশি আছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। তবে এদের মধ্যে সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী। এ ছাড়া অনেক সন্ত্রাসী জেল থেকেই নিজ অনুসারীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বলা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এ দুই এলাকার বাসিন্দারা সন্ত্রাসীদের ভয়ে তটস্থ থাকছে।

এ ছাড়া মিরপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার ইব্রাহিম ও তার শ্যালক সাহেদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত ও রায়হান, বিহারি জনি, শীর্ষ সন্ত্রাসী কাউছার আহমেদ জয় ওরফে জয় ফালান, আশিক বাহিনীসহ প্রায় ৬০টি সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।

সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের অপরাধপ্রবণতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এলাকা দুটি অনেক আগ থেকে অপরাধপ্রবণ। ওই এলাকায় একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর বসবাস। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এলাকা দুটিতে নতুন করে সন্ত্রাসের রাজ্য গড়ে উঠেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব নিয়েন্ত্রণে আনা হবে, গ্রেপ্তার হবে সন্ত্রাসীসহ সব ধরনের অপরাধীরা।

আতঙ্কের নাম মোহাম্মদপুর

মোহাম্মদপুরের স্থানীয়রা জানান, বিগত সরকারের সময়ও এ এলাকায় যেমন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পরও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত মোহাম্মদপুরে চারটি হটস্পটকে কেন্দ্র করে সক্রিয় রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীরা। এই চার হটস্পট হচ্ছেÑ বসিলা বেড়িবাঁধ, ঢাকা উদ্যান, জেনেভা ক্যাম্প ও টাউন হলের বিপরীত পাশের বিহারি ক্যাম্প। চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটে এসব এলাকার স্থানীয়দের। সন্ধ্যা নামতেই থমথমে হয়ে যায় এলাকার প্রতিটি আবাসিক ভবন আর সড়কগুলো। কখন, কোথায়, কে অপরাধের শিকার হবেন, অনুমান করতে পারেন না কেউ।

কথা হয় মোহাম্মদপুরের স্থানীয় বাসিন্দা জিসান আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখনো সব নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের দোসোররা। এই গডফাদাররা সবকিছুর শেল্টার দিচ্ছে। তারা মোটা অঙ্কের টাকার মাধ্যমে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। অনেকে এখন জেলে থেকেও এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের অনুসারীদের নামের তালিকা আছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছে। তাদের ধরলেই মোহাম্মদপুর ঠান্ডা হয়ে যাবে।’

চলতি বছরের ২৭ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ফরিদ আহমেদ বাবু ওরফে এক্সেল বাবুসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং ভূমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগে ১৫টির বেশি মামলা ছিল। সেনাবাহিনী জানায়, এক্সেল বাবু কিশোর গ্যাং ‘টিন এজ টর্নেডো, ডার্ক স্ট্রাইকার্স, রেড ভলক্যানো এবং কবজি কাটা আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ারের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। 

এদিকে গত ২ জুলাই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থেকে মোহাম্মদপুরে কবজিকাটা গ্রুপের অন্যতম প্রধান সহযোগী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং লিডার মো. বাবু খান ওরফে টুন্ডা বাবুকে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৬।

মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে তৎপড়তা বাড়ে পুলিশের। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও কমছে না এহেন কর্মকা-। এদিকে মোহাম্মদপুরকে ঐতিহ্যগতভাবে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা। তাদের মতে, রাজধানীর অন্যান্য থানার তুলনায় মোহাম্মদপুর যেমন আয়তনে বড়, তেমনি বেশি অপরাধীর বিচরণক্ষেত্রও। তা ছাড়া জেনেভা ক্যাম্প নামের অতিঘন জনবসতির এলাকা ঘিরে অপরাধীদের আনাগোনা এমনিতেই বেশি। ফলে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা অনেক সময় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। সরকারপতনের আন্দোলন দমন করার জন্য এই এলাকার সন্ত্রাসীর হাতে শত শত অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল, যার বেশির ভাগই এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেই অস্ত্রগুলো দিয়ে এখন অপরাধীরা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশের বিশেষ একটি সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানায়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী গত ১৩ মাসে এই থানায় দেড় হাজারের মতো মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আসামি কয়েক হাজার। যদিও এর মধ্যে অধিকাংশ আসামি রাজনৈতিক দলীয় সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ দাগি আসামি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. রফিক আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, গত কয়েক দিনে আমাদের থানায় কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্ত্রাসী চক্রসহ বড় দাগের অপরাধীরা ধরা পড়ছে। থানার পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর রয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যে অপরাধ করবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। 

মোহাম্মদপুর জোনের দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘অপরাধীদের ধরতে প্রতিদিন আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। অসংখ্য অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ২২ তারিখ সোমবারও ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং এবং রাজনৈতিক অসাধুরা রয়েছে। তা ছাড়া আমরা শীর্ষ সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে যারা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা-, আধিপত্য বিস্তার ও অন্যান্য অপকর্ম করছে, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশ কাজ করছে। এরই মধ্যে এ এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমে এসেছে।’  

মিরপুরে সন্ত্রাসের নতুন গডফাদার ও বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

গোয়েন্দা সূত্রমতে, মিরপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত, কিলার ইব্রাহিম ও তার শ্যালক সাহেদ, রায়হান, বিহারি জনি, কাউছার আহমেদ জয় ওরফে জয় ফালান, আশিক বাহিনীসহ প্রায় ৬০টি সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। এ এলাকায় বসবাসরত একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামল থেকেই মিরপুর এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের চাঁদাবাজি, দখল, মাদক কারবার, ছিনতাই ও টার্গেট কিলিংয়ে। সাম্প্রতিক ছাত্র-গণআন্দোলনে বিগত সরকারের পতনের পরও নতুন কোনো গডফাদারের ছত্রছায়ায় এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব থেকে তারা সরকারের কাছে মুক্তি দাবি করেছেন। 

সূত্র জানায়, ডিএমপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটনের অধীনস্থ রাজধানীর মিরপুর বিভাগের সাতটি থানায় প্রায় প্রতিদিন ধরা পড়ছে শীর্ষ সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও এর পৃষ্ঠপোষকেরা। সম্প্রতি পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা এ এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সম্প্রতি মিরপুরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ওপরমহল থেকে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে অপরাধ দমনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

এদিকে ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, মিরপুর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং ও শীর্ষ সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে পল্লবী থানায়। গত আগস্ট মাসে এ থানায় দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। আর চলতি মাসে আগের মাসের তুলনায় মামলার সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছে সূত্র। এ ছাড়া মিরপুরের প্রতিটি থানায় গত এক মাসে কয়েক শ মামলা হয়েছে বলেও জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ২০ থেকে ৩০ জনের মতো অপরাধীকে আইেনের আওতায় আনা হচ্ছে।  আজও (গতকাল) ২২ জন কিশোর গ্যাং ও এলাকার পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আলাদাভাবে নজরদারি করে তাদের অপরাধের তথ্য-প্রমাণ নিয়েই আমাদের থানার পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শক্ত অবস্থানে রয়েছি।’

মিরপুরের সন্ত্রাসী জনির ভয়ে বাড়িওয়ালা থেকে ভাড়াটিয়ারাও আতঙ্কে
অন্যদিকে রাজধানীর পল্লবী ও মিরপুরে সন্ত্রাসী জনি ওরফে বিহারি জনিসহ ডজনখানেক সন্ত্রাসী গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজত্ব করছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জনি নিজেকে ছাত্রদলের নেতা দাবি করলেও তার দলীয় পদ নেই। তবে তিনি এ এলাকায় আরেক সন্ত্রাস যুবদলের এক প্রভাবশালী নেতার ছোট ভাই বলে দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, জনির নামে ১৫ থেকে ২০টি মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। কয়েকজন ভুক্তভোগী রূপালী বাংলাদেশকে জানান, জনির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ যুক্ত রয়েছে। যদিও জনির দাবি, সে পুলিশকে ম্যানেজ করে সব অপকর্ম চালিয়ে আসছে।

এলাকাবাসীর বরাতে জানা গেছে, জনি একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী। খুন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ একাধিক গুরুতর অপরাধে জড়িত। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর ৫ আগস্ট মুক্তি পেয়ে এলাকায় পুনরায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। নিজেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের ভাই মশিউরের ‘শুটার’ পরিচয় দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জনির ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে বা থানায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না।

মিরপুরের পল্লবীতে বসবাসরত জয়নাল আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি একজন বাড়িওয়ালা। বিহারি জনির অত্যাচারে আমি অতিষ্ঠ। আমার বাড়িতে লোকজন পাঠিয়ে বলছে, ছাত্রদল নেতাকে চাঁদা না দিলে ভাড়াটিয়াদের বাসা থেকে নামিয়ে দিবে। তাদের বিষয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ সেনাবাহিনীর কথা বলে। আমাদের এলাকায় তার ভয়ে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা আতঙ্কে আছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, পুলিশ সেগুলো নিয়ে কাজ করছে। তবে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে, তবেই এসব অপরাধ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সবকিছু কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করছে। অপরাধীরা ধরাও পড়ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!