হেলিকপ্টার থেকে বোম্বিংয়ের  নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার চলমান আন্দোলন দমন করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছত্রীসেনা নামানো এবং হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাঁস হওয়া একটি অডিও থেকে জানা গেছে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চলমান একটি মামলার শুনানিতে শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর মধ্যে কথোপকথনের অডিও শোনানো হয়। ট্রাইব্যুনালের এ দিনের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

জুলাই-আগস্টের ‘গণঅভ্যুত্থান’ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এদিন রাষ্ট্রপক্ষের ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। তিনি জানান, এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার) থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার তিনটি নম্বরের কললিস্ট (সিডিআর) এবং ৬৯টি অডিও ক্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে।

হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে; শোনানো অডিওতে শেখ হাসিনাকে স্পষ্টতই বলতে শোনা যায়: ‘নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা নামাচ্ছি... ঠিক আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে।’ অন্যদিকে হাসানুল হক ইনুকে বলতে শোনা যায়: ‘আমি মনে করি, আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে। কারণ, দুই পাশ দিয়ে ধরবে।’ ‘মোল্লা না, মাদ্রাসাÑ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ অডিওতে রামপুরা ও শনির আখড়া এলাকার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। ইনু বলেন, শনির আখড়ায় কিছু মোল্লা আছে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালি মোল্লা না, অনেক মাদ্রাসা। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে বলেছি।’

ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলন দমন; প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা তার জবানবন্দিতে বলেন, আন্দোলন দমনে সরকার পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। আন্দোলনকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করে লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, আন্দোলনকারীদের দমন করতে গুলি চালানোর নির্দেশনাও উচ্চপর্যায় থেকে দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেওয়ার সময় তানভীর হাসান পাঁচটি অডিও ক্লিপ জমা দেন, যার মধ্যে চারটি এদিন আদালতে চালানো হয়। এর দুটি অডিওতে শেখ হাসিনা ও ইনুর কথোপকথন সংরক্ষিত ছিল। অডিও ক্লিপগুলো মামলার আলামত হিসেবে দাখিল করা হয়েছে এবং তা বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নগরজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে ব্যাপক ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়। আন্দোলন দমন করতে সরকারের কঠোর অবস্থান, ইন্টারনেট বন্ধ এবং সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনা দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়।