- রাজধানীতে চলাচল করছে আনুমানিক ১২ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা
- দেশজুড়ে অটোরিকশার সংখ্যা ৬০ লাখেরও বেশি
- করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে বেড়েছে অটোরিকশার প্রাদুর্ভাব
- গলিপথের পাশাপাশি হাওয়ার বেগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মূল সড়কেও
- ঢাকার পাশপাশি দেশের বিভিন্ন বড় শহর এবং গ্রামাঞ্চলেও দাপট অটোরিকশার
- চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট ১ লাখ ৯১ হাজার ২৫২টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। ডাম্পিং করা হয়েছে ৪০ হাজার ২৫৭টি
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোরিকশার ব্রেকিং সিস্টেম ও কাঠামো দুর্বল, তাই এটি বিপজ্জনক বাহন
- এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হলে আগামীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা
- উল্টো পথে চলাচলে বাড়ছে যানজট। দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ
বেলা পৌনে ১১টা। ধোলাইখাল থেকে যাত্রাবাড়ীগামী যানবাহনকে দয়াগঞ্জ মোড় সিগন্যালে থামিয়ে দেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ। একই সঙ্গে জুরাইন থেকে গুলিস্তানগামী যানকেও থামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় যাত্রাবাড়ী-দোলাইরপাড় থেকে গুলিস্তান ও ধোলাইখালগামী পরিবহনকে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়। ধোলাইখালগামী গাড়িগুলো দ্রুত পার হতে পারলেও গুলিস্তানের পথে যেতেই বাধে বিপত্তি। কারণ সিগন্যাল অমান্য করে অজ¯্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে গুলিস্তানগামী যান চলাচল বিঘœ হচ্ছে। মুহূর্তেই জটলা বেঁধে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। এর মধ্যেই উল্টো পথে এসে হুটহাট ঢুকে পড়ছে অটোরিকশা। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থায় পড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।
গত মঙ্গলবার বেশ কিছুক্ষণ দয়াগঞ্জ মোড়ে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা দোলাইরপাড়। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া ও আসার প্রধান পথ এটি। দোলাইরপাড় চৌরাস্তার উত্তরে যাত্রাবাড়ী, পশ্চিমে মীর হাজীবাগ, পূর্বে দনিয়া ও দক্ষিণে জুরাইন-পোস্তগোলা এলাকা। চৌরাস্তার একটা অংশে ডাইভারশন থাকায় পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে যেতে দক্ষিণের রাস্তা ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু সেটা না করে অটোরিকশাগুলো উল্টো পথেই যাতায়াত করছে, এর সঙ্গে আছে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। ফলে এই স্থানে সঠিক পথে আসা অনেক যানবাহনের চালক ক্ষণিকের জন্য হলেও সম্বিৎ হারাতে পারেন। এসব কারণে প্রায়ই জটলা তৈরি হয় ব্যস্ত এই চৌরাস্তায়। শুধু দয়াগঞ্জ কিংবা দোলাইরপাড় চৌরাস্তাই নয়, এমন চিত্র ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি ব্যস্ত ট্রাফিক পয়েন্টের।
ব্যস্ত ঢাকার সড়কগুলোয় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অটোরিকশা। গলিপথ ছেড়ে বর্তমানে রাজধানীর প্রধান সড়কে হাওয়ার বেগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশা। ফলে একদিকে যেমন তৈরি হচ্ছে যানজট, অন্যদিকে ঝুঁকি বাড়ছে দুর্ঘটনার। দ্রুতগতিতে মোড় নেওয়া, হঠাৎ ব্রেক এবং আইনের তোয়াক্কা না করায় সড়কে এখন আতঙ্কের নাম তিন চাকার এই ছোট্ট যান। সিগন্যাল অমান্যের পাশাপাশি হরহামেশা উল্টো পথে চলাচলের কারণে ভেঙে চুরমার হচ্ছে সড়কের শৃঙ্খলা। জব্দ কিংবা জরিমানা করেও এসব যান ও চালকদের বাগে আনতে পারছে না ট্রাফিক পুলিশ।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর দ্রুতই পাস হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হলেও হয়নি কোনোটির বাস্তবায়ন। এতে মেলেনি নতুন আইনের কোনো সুফল।
বিআরটিএসহ বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে, বর্তমানে দেশজুড়ে অটোরিকশার সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই চলছে ১২ লাখ। অটোরিকশাচালকদের স্বেচ্ছাচারি মনোভাব আর নিয়ন্ত্রণহীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পথচারী ও গাড়ির চালকেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু প্রধান সড়কেই নয়, দীর্ঘ মেয়াদে শাখা সড়কেও অটোরিকশা চলা উচিত নয়, কারণ তাদের অনিয়ন্ত্রিত গতি বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যানজট ও সড়ক নিরাপত্তার সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। কিন্তু এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হলে আগামীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বড় বাসভিত্তিক পরিবহন, আধুনিক ট্রানজিট-ব্যবস্থা এবং ছোট যানবাহন ব্যবস্থাপনায় সুস্পষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা, জনসচেতনতা ও প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
গত মঙ্গলবার জুরাইন-পোস্তগোলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনো প্রকার নিয়মনীতি না মেনেই সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো। স্থানীয়দের ভাষ্য, জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজা থেকে দোলাইরপাড় পর্যন্ত সড়কে একটা সময় উল্টো পথে গাড়ি চলাচল ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতো। এখন তা যেন রুটিন চিত্রে পরিণত হয়েছে। রাতের অন্ধকারে যেমন, দিনের আলোয়ও এসব অটোরিকশা বিনা দ্বিধায় উল্টো পথে ছুটছে। ফলে দোলাইরপাড় থেকে জুরাইনে যাওয়ার রাস্তাটিতে দিনের অধিকাংশ সময় যানজট লেগেই থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জুরাইনে রাস্তার অর্ধেকটা জুড়ে দোকানপাট। এরপর সিএনজি অটো স্ট্যান্ড। এরপর যে পথটুকু থাকে, এর মধ্য যদি উল্টো পথে গাড়ি চলে, তাহলে সেই রাস্তার অবস্থা কী হয় বলেন? এই রাস্তায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অটোরিকশার উল্টো পথে চলাচল যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালালে একটু স্বস্তি মিললেও পরের দিনই যে সেই অবস্থা।’
ডিএমপির ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের যাত্রাবাড়ী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আকতারুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এদের চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা নেই। এরা উল্টো পথে যাতায়াতের ফলে পিক আওয়ারে রাস্তায় তীব্র জ্যাম সৃষ্টি হয়। আমরা আমাদের জনবল অনুযায়ী কিছু অটোরিকশাকে ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পিক আওয়ারে উল্টো পথে চলাচল বন্ধ করি, এ ক্ষেত্রে কিছুটা আউটপুট পাওয়া যায়। তবে সেটা সিমিত সময়ের জন্য। জায়গা ছেড়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য অন্যত্র গেলেই ফের উল্টো পথে চলাচল শুরু হয়।’
গত কয়েক দিন সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দোলাইরপাড়, দয়াগঞ্জ, মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, রামপুরা ও শান্তিনগর এলাকাসহ কয়েকটি ফ্লাইওভার ঘুরে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য চোখে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লাইওভারে অটোরিকশা চালাচলে প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। মৌচাক ফ্লাইওভারেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে সকাল ও বিকালে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশা যাত্রী নিয়ে ফ্লাইওভার অতিক্রম করছে। এসব রিকশার কারণে ফ্লাইওভারে যান চলাচলের গতি যেমন কমছে, তেমনি তীব্র যানজটও তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বঙ্গভবনের সামনের রাস্তায় সব সময়ই উল্টো পথে অটোরিকশা রাজউক ভবন ও মতিঝিলের দিকে যেতে দেখা গেছে।
দয়াগঞ্জে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আজিজ বলেন, ‘এই রিকশাগুলো নিয়ম মানতেই চায় না। কিছু বললে বা ধরলে চালকেরা দলবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ কিংবা কান্নাকাটি করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করেন। তবু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি সড়ক সচল রাখতে। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত কাজের বাইরে গিয়ে শুধু অটোরিকশার পেছনে সময় দিই, তাহলে তো কোনো রাস্তাই সচল থাকবে না।’
গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবন এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা ধরে পোস্তগোলা ডাম্পিং স্টেশনে পাঠায় পুলিশ। চালক মাসুদ মিয়া জানান, তার গাড়ি কাঁচপুরের। সেখান থেকে বিভিন্ন স্থানে যাত্রী নিয়ে চলতে চলতে বঙ্গভবন এলাকায় এলে পুলিশ ধরে ফেলে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবৈধ বলে কিছু নেই। যদি অবৈধই হতো, তাহলে অটোরিকশা বন্ধ থাকত। অটোরিকশা তৈরির মালামাল যত দিন চলবে, তত দিন এই রিকশা বন্ধ করা যাবে না।’
অপর এক রিকশাচালক মনির সিকদার বলেন, ‘সরকার আমাদের কাজের ব্যবস্থা করুক আগে, পরে অটোরিকশা বন্ধ করে দিক।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গভবন এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘অটোরিকশার দৌরাত্ম্যের কারণে আমাদের স্বাভাবিক ট্রাফিক পুলিশিং কার্যক্রম চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এরা হরহামেশা যেখানে-সেখানে রিকশা নিয়ে ঢুকে পড়ছেÑ সিগন্যাল, রুট কিছুই মানে না। তবে সড়কগুলো সচল রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
গুলিস্তানে কথা হয় প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের চালক লতিফ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশাগুলা গাড়ির সামনে এসে যে কোনো সময় ইউটার্ন নেয়, হঠাৎই ব্রেক করে। ফলে রাস্তার মধ্যে জ্যাম লেগে যায়। এই রিকশা নিয়ে ভয়ে থাকি, কখন সামনে এসে পড়ে, কখন দুর্ঘটনা ঘটে।’
বোরাক পরিবহনের চালক মাসুদ বলেন, ‘মেইন রোডে যেভাবে অটোরিকশা চলছে, রাস্তায় গাড়ি চালানো মসিবত হয়ে পড়ছে। এগুলো অনেক জোরে চলে, প্রায়ই এক্সিডেন্ট হয়। এই অটোর কারণে যানজটও বেশি হয়।’
ডিএমপির ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাজিদুর রহমান বলেন, ‘অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত ডাম্পিং করি, অনেক সময় তার কেটে দেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গলির মুখ থেকেই বা উল্টে পথে এলে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এতে শতভাগ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ অটোরিকশার পরিমাণ অনেক বেশি। একদিক দিয়ে আটকালে অন্যদিক দিয়ে চলতে চায়। তার পরেও আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে। এ ক্ষেত্রে পিক আওয়ারে একটি বেশি খেয়াল রাখতে হয়। আমরা যেমন ওদের নজরদারিতে রাখি, ওরাও আমাদের চোখে চোখে রাখে। সুযোগ পেলেই উল্টো পথে বা মূল সড়কে যাতায়াত করে।’
গুলশান-বনানীতেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করায় বিরক্ত এখানকার বাসিন্দা ও চলাচলকারীরা। তারা জানান, সিগন্যাল না মানা, উলটো পথে চলা, যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছোটাÑ সবই করে এসব রিকশা। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে দ্রুতগতির গাড়ি থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীÑ সবাই পড়ছে ঝুঁকির মুখে।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন তৈরি হওয়ার পরে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলেছি। মূলত এই সময়ের পরেই ব্যাপকভাবে নিবন্ধনবিহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় নেমে পড়েছে, যা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ আইন বাস্তবায়নের অন্যতম বড় বাধা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের বিশৃঙ্খলা শুধু সময়ই অপচয় করছে না, ক্ষতি করছে দেশের অর্থনিতিরও। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘শুধু এই সরকার নয়, গত সরকারের সময় থেকেই রাস্তায় বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল দেশের প্রায় প্রতিটি বড় শহরেরই সমস্যা। সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অনেক কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। আমরা উন্নত অর্থনীতির দেশের স্বপ্ন দেখছি, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতের পথে রয়েছি। আমরা যদি আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে না পারি, তাহলে স্বপ্নটা ছুঁতে পারব না।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, অটোরিকশার ব্রেকিং সিস্টেম ও কাঠামো দুর্বল, তাই এটি বিপজ্জনক বাহন। এই বাহনের স্ট্যাবিলিটি তার সেন্টার অব গ্রাভিটির ওপর নির্ভর করে, কিন্তু প্যাডেলচালিত রিকশায় ব্যাটারি যোগ করলে তার গ্রাভিটি বদলে যায়, ফলে দ্রুতগতিতে বাঁক নিলে অটোরিকশা উল্টে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা সহজ নয়, কারণ ঢাকা শহরে এখন আনুমানিক ১২ লাখ অটোরিকশা চলাচল করছে। এই বাহনের সঙ্গে জীবন-জীবিকা জড়িত। ফলে রিকশা বন্ধ করা সহজ নয়, তবে আপাতত মূল সড়কে এগুলো বন্ধ করা উচিত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রের প্রধান শর্ত নগরীর প্রতিটি রুটে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লাইন বাস নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা-অটোরিকশা বন্ধ এবং অন্যান্য সড়কে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রিকশা কীভাবে চলাচল করবে, সে বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শক্ত প্রয়োগ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের হাতে বিকল্প না থাকায় তারা অটোরিকশা ব্যবহারে বাধ্য হন। নগর বাস এবং অন্যান্য সড়কে বিকল্প সরকার অনুমোদিত ছোট বাহন থাকলে অটোরিকশা ব্যবহার স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তবে বিকল্প সৃষ্টি না করে হঠাৎ করেই অটোরিকশা বন্ধ করলে তা কর্যকর না হয়ে হিতে বিপরীত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে চলাচল করা অটোরিকশাগুলো বিষফোড়ার মতো। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের অজুহাতে অটোরিকশাচালক বা রাজধানীর ফুটপাত ও মূল পথ দখলকারী হকারদের বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। নগরের শৃঙ্খলা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৯১ হাজার ২৫২টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এর মধ্যে ৪০ হাজার ২৫৭টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন, প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ-১) আনিছুর রহমান বলেন, অটোরিকশার বিষয়ে আমাদের নিয়মিত মনিটরিং রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদি সেটা না হতো, তাহলে এত দিনে প্রধান সড়কে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ত।