- আজ সোমবার মিশরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা শুরু
- গাজায় থামেনি হামলা। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ হাজার ১৩৯ জন
- এ যুদ্ধ আদৌ থামবে কি নাÑ এ নিয়ে অনিশ্চিত খোদ গাজাবাসী
- ইসরায়েল সম্মত হলে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে চায় হামাস
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় গতি আনতে ইসরায়েল ও হামাসের ওপর চাপ বাড়ছে। গত শনিবার মিশর ঘোষণা দিয়েছিল আজ সোমবার থেকে শারম আল শেখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হবে। এদিকে গাজায় শান্তি আলোচনা নিয়ে বৈঠকের আগে ট্রাম্পের অনুরোধের পরও গতকাল রোববার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ জন। হামাসের এক মুখপাত্র গতকাল এএফপিকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল সম্মত হলে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইসরায়েল ও হামাসকে দ্রুততম সময়ে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও গত প্রায় দুই বছরের এ যুদ্ধ আদৌ থামবে কি নাÑ এ নিয়ে অনিশ্চিত খোদ গাজাবাসী। খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব, নিয়মিত ইসরায়েলি হামলা, ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে গাজার লাখো মানুষ।
গতকাল রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা যুদ্ধ নিয়ে শান্তিচুক্তি এখন অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য তিনি চাপ দেবেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিবিকে বলেছি, এটা তোমার জন্য বিজয়ের সুযোগ। তিনি তাতে রাজি ছিলেন। তার রাজি হতেই হবে। আমার সঙ্গে থাকলে রাজি হতেই হবে।’
ট্রাম্পের প্রকাশ্য বক্তব্য এবং অন্তরালের কূটনৈতিক তৎপরতা ইসরায়েল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতি এবং শান্তিচুক্তির কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। প্রায় দুই বছর আগে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মিশরে যাচ্ছেন। তারা সেখানে বন্দিমুক্তি চুক্তির কারিগরি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবেন এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন।
এর আগে, গত শনিবার সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজায় প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে। বিমান হামলাও বন্ধ রাখা হয়েছে, শুধু আত্মরক্ষার প্রয়োজনে সীমিত হামলা চালানো হচ্ছে। তার আগে, শুক্রবার ট্রাম্প ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারা যেন হামলা বন্ধ করে হামাসের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছেন, তিনি সামরিক অভিযান স্থগিত করেছেন। তার দপ্তর জানিয়েছে, ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী বন্দিদের তাৎক্ষণিক মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। তবে মাঠের বাস্তবতা বলছে, গাজায় আক্রমণ এখনো বন্ধ হয়নি।
গতকাল ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, ‘হামাস নিশ্চিত করলে যুদ্ধবিরতি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে, শুরু হবে বন্দি ও কয়েদি বিনিময় এবং পরবর্তী ধাপের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নেওয়া হবে। আর এটিই আমাদের ৩ হাজার বছরের এই বিপর্যয়ের অবসানের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাবে।’
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামালায় অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় ৬৫ জন নিহত এবং আরও দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময়ে আহত হন অন্তত ১৫৩ জন। এ নিয়ে গাজায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ১৩৯ এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন। যদিও গতকাল রাত ৮টায় আলজাজিরা গাজার হাসপাতাল সূত্রের খবরে জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় নতুন করে ১৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা হুমকি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে সরকার ভেঙে দিতে পারেন। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের জোট সঙ্গী কট্টর ডানপন্থি ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের নেতা ও ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন-গভির সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরও হামাস টিকে থাকে, তাহলে তাঁর দল সরকারের বাইরে চলে যাবে। তার দল নেতানিয়াহুর জোট ছাড়লে সরকার পতনের সম্ভাবনা আছে।
বেন-গভির স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি এবং ওৎজমা ইয়েহুদিদের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, যদি বন্দিদের মুক্তির পরও হামাস নামের সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে যায়, তাহলে আমরা সরকারের অংশ থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, তার দল কোনোভাবেই জাতীয় পরাজয়ের অংশ হবে না। এটা ইসরায়েলের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি অবশ্য বলেছেন, তারাও বন্দিদের ঘরে ফেরার পক্ষে। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘যে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাদের আবার মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ আমরা মেনে নিতে পারি না।’
এদিকে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বার্তাসংস্থা এএফপিকে গতকাল রোববার বলেছেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে হামাস যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি এবং জিম্মিদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে রাজি। দখলদাররা যেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ প্রস্তাবে বাধা না দেয়। যদি ইসরায়েলি দখলদাররা সত্যিকার অর্থে চুক্তি করতে চায়, তাহলে হামাস প্রস্তুত।’
নাম গোপন রাখার শর্তে হামাসের এ নেতা আরও বলেছেন, ‘আলোচনার লক্ষ্য হলোÑ জিম্মিদের ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তরের পরিবেশ তৈরি করা। এর মাধ্যমে বন্দি বিনিময়ের প্রথম ধাপ শুরু হবে।’
তিনি জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে হামাস শর্ত দিয়েছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজার সব অঞ্চলে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। সব ধরনের বিমান, নজরদারি ও ড্রোন কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে এবং গাজা সিটি থেকে তাদের সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
হামাসের এ নেতা আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র দলগুলো তাদের সামরিক অভিযান এবং কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে।’