ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্র্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রচেষ্টাই হলোÑ জুলাই সনদ। এই আলোচনায় কয়েকটি দলের কিছু বিষয়ে দ্বিমত কিংবা নোট অব ডিসেন্ট আছে তারপরও তারা সনদে স্বাক্ষর করেছে। তবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি কি হবে, পরবর্তী সমযে বিষয়গুলোকে নিয়ে টানাপোড়ন চলবে তা নিয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে। তারা স্বাক্ষর করেনি। তবে আজকে স্বাক্ষর না করলেও পরবর্তী সময়ে তাদের স্বাক্ষর করার সুযোগ আছে। ঐক্যমত কমিশনেরও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনারও সুযোগ রয়েছে।
তবে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, মূলত এ বিষয়গুলো আগামী দিনের বাংলাদেশের গণতন্ত্র পরীক্ষার টার্নিং পয়েন্ট নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এটা করা হচ্ছে বলে মনে করি। এনসিপি নতুন রাজনৈতিক দল তারা কিন্তু জনগণের মধ্যে তেমন প্রভাব রাখতে পারেনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে তাদের সমর্থিত প্যানেল খুবই খারাপ ফল করেছে। তাদের কাছ থেকে মৌলিক কোনো কর্মকা- জনগণ আশা করছে না। সে কারণে তারা সারা বাংলাদেশ যে ট্যুর করেছে সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সহায়তা ছিল। তাদের কর্মকা-ে আমরা হতাশ।
জুলাই সনদে তারা বাধাগ্রস্ত করছে এটা যথাযথ নয়। জামায়াতে ইসলামী যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলছে, তা অধিকাংশ সাধারণ মানুষ বুঝে না। তারপরও আলোচনা করে যদি এটা দেশের জন্য মঙ্গল হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলোÑ এখনই কেন।
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে, তবে এ বিষয়ে নানা অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে। তবে আলাপ-আলোচনার কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংগঠিত করতে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দ্বিমত থাকবে কিন্তু জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে একমত হয়ে আমরা যদি সনদটার ভিত্তি দেই আর আগামী দিনে যে সরকার আসবে তারা যদি সনদের বৈধতা না দেয় তাহলে জনগণ তো আছেই। তাদের নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে।
মূল কথা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এবং তার অন্তর্বর্তী সরকার যাতে নির্বাচন করতে না পারে, সে জন্য নানা ইস্যু তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি শিক্ষক আন্দোলনকে সামনে আনা হয়েছে। এটা হঠাৎ করে সামনে আনা হলো কেন? এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। একেবারে হুমকি দিয়ে দাবি আদায় করে নেওয়ার নেপথ্যে নানা শক্তি রয়েছে।
সর্বোপরি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা শিক্ষক হিসেবে আমি বলব, সবাই মিলে বসে যদি মতপার্থক্যগুলো দূর করতে পারি, জনগণকে আমরা অগ্রাধিকার দেই তাহলে আগামী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা সনদকে বৈধতা দিবে। এটা জনগণ আশা করছে। অন্তর্বর্তী সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। তারা জুলাই সনদকে বাস্তবায়ন করে জনগণ যাদের ভোটের মাধ্যমে রায় দেবে সেই নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে বিদায় নিতে চাচ্ছে।
অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন