জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার সংসদ ভবনের সামনে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘জুলাই-যোদ্ধা’দের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থানায় পাঁচটি মামলা করেছে পুলিশ। এর একটি ধানমন্ডি মডেল থানায় হয়েছে। যাতে আসামি ৭০ জন। এ ছাড়া শেরেবাংলানগর থানায় পুলিশের করা চার মামলায় ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় রিমন চন্দ্র বর্মন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, রিমনকে গত শুক্রবার ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছিল। পরে যাচাই-বাছাই শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গতকাল মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে ধানমন্ডি মডেল থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা জানান, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিসাধন ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় ৭০ জন অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামির বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়ি ভাঙচুরে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।
এদিকে, শেরেবাংলানগর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করে। চার মামলায় মোট আসামির সংখ্যা প্রায় ৯০০ জন। শেরেবাংলানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক জানান, শুক্রবারের ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করা হয়েছে সংরক্ষিত এলাকায় জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগে। বাকি মামলা তিনটি হয়েছে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও কন্ট্রোলরুম পোড়ানোর অভিযোগে।
এই মামলায় রিমন চন্দ্র বর্মন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতর রাজনৈতিক কোনো পরিচয় আছে কি না, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলায় আসামি করা হয়েছে সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী, অনিষ্টকারী, সরকারি সম্পদ ক্ষতিসাধনকারী, নাশকতাকারী ও ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের লোকজনকে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকাটি সংরক্ষিত অঞ্চল। সেখানে জোর করে ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
গত শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েক শ মানুষ নিজেদের তিনটি দাবি জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেট টপকে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোলরুমে অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় প্রায় দুই ঘণ্টা থেমে থেমে তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে ধানম-ি ২৭ নম্বরের দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় পুলিশের অন্তত ১০ জন ও জুলাই-যোদ্ধাদের ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরেও গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
এই সংঘর্ষের ঘটনাকে পুলিশি হামলা উল্লেখ করে শুক্রবার রাতেই প্রতিবাদ জানিয়েছে জুলাই-যোদ্ধা সংসদ নামে একটি সংগঠন। এ ছাড়া তিন দফা দাবি বাস্তবায়নসহ হামলার প্রতিবাদে রোববার (আজ) সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠনটি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন