জয়ের জন্য লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বিষাক্ত স্পিনের সামনে টিকে থাকতে পারলেন না ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। রিশাদ হোসেনের স্পিন ম্যাজিকে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দেওয়া ২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৩৩ রানেই অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৪ রানের জয় পেয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। আগামী ২১ অক্টোবর সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক জয় পেয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে বিধ্বস্ত হয়ে এসে জিতেছে তারা। সর্বশেষ টানা ১৩ ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়ের রেকর্ড এটি। গত বছর শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে হতাশা শুরু হয়েছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীদের। হারের হতাশায় ডুব দেওয়া বাংলাদেশ ঘরের মাঠে আলোর রেখার দেখা পেয়েছে। টানা চার ম্যাচ পর ওয়ানডেতে জিতল বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে রেকর্ড গড়েছেন রিশাদ। বাংলাদেশের প্রথম ডানহাতি স্পিনার হিসেবে ৫ উইকেট শিকার করলেন তিনি। এর আগে ডানহাতি স্পিনার হিসেবে রাজিন সালেহ ১৬ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে নেমে রিশাদের স্পিনেই এলোমেলো হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের প্রথম ৫ উইকেট নেন রিশাদ। রিশাদের পঞ্চম উইকেট শিকারের সময় ক্যারিবীয়দের দলীয় রান ছিল ৯২। এরপর মিরাজ তুলে নেন আরও ১ উইকেট। মোস্তাফিজ নেন ২ উইকেট। শেষ উইকেট নেন রিশাদ। ৩৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট পান এই লেগ স্পিনার। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি।
এর আগে মিরপুরের কালো মাটির মন্থর উইকেটে শুরু থেকেই টার্ন পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনাররা। তাদের পাশাপাশি পেসারদের বলও আচমকা নিচু হয়ে যাওয়ায় ভুগতে হলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। এমন পিচে পুরো ওভার কাটানোই ভীষণ মুশকিল! সাবধানতায় খেললেও সেটা করতে না পেরে ২ বল বাকি থাকতেই ২০৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন তাওহিদ হৃদয়। তার ৯০ বলের ইনিংসে ৩টি চার রয়েছে। অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৭৬ বলে ৪৬ রান করেন। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৬৩ বলে ৩২ রান। শেষ দিকে রিশাদ হোসেন ২৬ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেললে ২০০ পেরোতে পারে বাংলাদেশ। তিনি ১৩ বল মোকাবিলায় মারেন ২টি চার ও ১টি ছক্কা। দেখেশুনে খেলে ২৯.৫ ওভারে দলীয় শতরান পূর্ণ করার পর একদম শেষ বেলায় বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ে। শেষ ৫ ওভারে তারা ৫ উইকেট হারালেও যোগ করে ৪৩ রান। এর আগে সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকারের নতুন উদ্বোধনী জুটি সুবিধা করতে পারেনি। স্কোর বোর্ডে ৮ রান যোগ হতেই সাজঘরে ফেরেন তারা। রোমারিও শেফার্ডের একটু নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন সাইফ। ফেরার ম্যাচে জেইডেন সিলসের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সৌম্য। শুরুর চাপের পর বেশ কয়েকটি জুটি হলেও রানের চাকা হয়ে পড়ে শ্লথ। ক্যারিবিয়ান স্পিনাররা ধরে ফেলেন লাগাম। প্রতিকূল পিচে খোলসে ঢুকে যান বাংলদেশের ব্যাটসম্যানরা। তৃতীয় উইকেটে শান্ত ও হৃদয় যোগ করেন ১২০ বলে ৭১ রান।
টার্ন করা দারুণ ডেলিভারিতে রিভিউ নিয়ে শান্তকে থামান খ্যারি পিয়েরে। এরপর হৃদয়ের সঙ্গে ৭৫ বলে ৩৬ এবং অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৫৫ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন অঙ্কন। ফিফটি করার পরপরই জাস্টিন গ্রিভসের বলে কটবিহাইন্ড হন হৃদয়। ছক্কা মারার চেষ্টায় মিরাজ দেন ক্যাচ। তাকে ফেরানোর পর অঙ্কনকেও ঝুলিতে ঢোকান রোস্টন চেইস। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হওয়ায় অভিষেকে ফিফটি পাওয়া হয়নি অঙ্কনের। নুরুল হাসান সোহান আবার ব্যর্থ হলেও শেষ দিকে রিশাদ তোলেন ঝড়। ফলে বাংলাদেশের পুঁজি ২০০ ছাড়িয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সিলস তিনটি এবং চেইস ও গ্রিভস দুটি করে উইকে শিকার করেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন