মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

বাণিজ্য চুক্তির নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

বাণিজ্য চুক্তির নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব চুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টে (এফটিএ) গতি এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য কৌশলে নতুন দিক উন্মোচন করতে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ অনুবিভাগের এক সভা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মরিশাস, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বহুমাত্রিক বাণিজ্যিক আলোচনা ও চুক্তি সম্পাদনের এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব মুক্ত বাণিজ্য ও অংশীদারিত্ব চুক্তির সফল বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে, বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়বে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যনীতি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। প্রতিটি আলোচনার পেছনে আমাদের জাতীয় স্বার্থ নিহিত। সময়মতো, সমন্বিত ও তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা বৈশ্বিক বাজারে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের পথে। এ পরিবর্তনের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার অন্যতম হাতিয়ার। তাই প্রতিটি আলোচনার প্রস্তুতি হতে হবে সুনির্দিষ্ট, তথ্যসমৃদ্ধ ও ভবিষ্যৎমুখী।’

আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) নীতির আলোকে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পুল গঠন

সভা সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি নীতি, ২০২২-এর আওতায় একটি ‘বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ পুল’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে একটি ধারণাপত্র (কনসেপ্ট নোট) তৈরি করা হয়েছে, যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর মতামত গ্রহণ করা করা হবে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়Ñ এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত সংগ্রহের পর একটি কর্মশালা আয়োজন করা হবে, যাতে বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য কৌশল আরও পরিপূর্ণভাবে নির্ধারণ করা যায়। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ শাখাকে।

উৎপত্তি সনদ (সার্টিফিকেট অব অরিজিন) ইস্যুর ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা

সভায় উল্লেখ করা হয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে উৎপত্তি সনদ ইস্যুর ব্যবস্থা চালু করা এখন সময়ের দাবি। এটি কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এ লক্ষ্যে একটি নতুন কমিটি পুনর্গঠন করা হবে, যা ইলেকট্রনিক সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়ার নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত দিক নির্ধারণ করবে।

আরসিইপি-এ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি আলোচনা

সভায় জানানো হয়, আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি) বাংলাদেশের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে একটি কারিগরি দল (টেকনিক্যাল টিম) গঠন করা হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আরসিইপি সচিবালয়ের সঙ্গে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান ও সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ করে একটি নীতিপত্র তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ): জানা গেছে, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা ইপিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে বাণিজ্য সেবা অধ্যায়ের (পরিষেবা বিভাগে ট্রেড অধ্যায়) আলোচনাসহ মূল কাঠামোগত আলোচনা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ-জাপান আনুষ্ঠানিক নেগোসিয়েশনের (আলোচনা) প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ হয়েছে। এখন চূড়ান্ত অঙ্গীকারসূচি তৈরি করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। সিদ্ধান্ত হয়Ñ এফটিএ অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিবেদন সংগ্রহ নিশ্চিত করবেন।

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফা আনুষ্ঠানিক আলোচনা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রতিনিধিরা জানান, পরবর্তী দফার আলোচনায় বাংলাদেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক অবস্থান আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী আলোচনার আগে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে একটি নীতিগত কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি: বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা ইপিএ) প্রথম দফা আলোচনা এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়, দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি অবিলম্বে শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির শর্তাবলির খসড়া (টার্মস অব রেফারেন্স) এরই মধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়, প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক আলোচনা ঢাকায় আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ-সংযুক্ত আরব আমিরাত সামগ্রিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি: সভায় বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সামগ্রিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা সিইপিএ) স্বাক্ষরের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, চুক্তির প্রথম দফা আলোচনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য সম্ভাবনা: সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পরিচালনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ সমীক্ষার ফলাফল যাচাই ও অনুমোদনের জন্য ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে একটি যাচাই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ-মরিশাস ও বাংলাদেশ-নাইজেরিয়া চুক্তি: সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ-মরিশাস মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই কর্মশালা এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

অন্যদিকে, নাইজেরিয়ার সঙ্গে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিনিয়র সহকারী সচিব (এফটিএ-৬) এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে।

বাংলাদেশ-তুরস্ক বাণিজ্য চুক্তি: সভায় বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ-নেপাল ও বাংলাদেশ-ভুটান সিএসএলএম সভা: বাংলাদেশ-নেপালের অষ্টম এবং বাংলাদেশ-ভুটানের দশম কমার্শিয়াল সাব-লেভেল মিটিং (সিএসএলএম) অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী সময়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করে সভাগুলো যথাযথভাবে আয়োজন করতে হবে।

দাপ্তরিক নথি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক নির্দেশনা

সভায় এফটিএ অনুবিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রমে ই-নথি (ইলেকট্রনিক ফাইল) ব্যবস্থার ব্যবহার আরও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের বলা হয়, হার্ডফাইলের পরিবর্তে যতটা সম্ভব নথিপত্র নিষ্পত্তি ও চিঠিপত্র জারি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। এতে দপ্তরীয় কাজের গতি বাড়বে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।

এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভার অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রশাসন-৪ শাখায় প্রেরণ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!