রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

বিটিসিএল

পদ খালি ৬৭, নিয়োগ দিচ্ছে ৯২ জন সহকারী ব্যবস্থাপক

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

পদ খালি ৬৭, নিয়োগ দিচ্ছে  ৯২ জন সহকারী ব্যবস্থাপক

অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম বা জনবলকাঠামোতে উল্লেখিত পদের সংখ্যার বেশি লোকবল নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। ‘সহকারী ব্যবস্থাপক (কারিগরি)’ পদে ৬৭টি পদ খালি থাকলেও ৯২ জন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। এই পদে বর্তমানে কর্মরতদের মধ্য থেকে ২৫ জনের পদোন্নতি হয়ে পদগুলো শূন্য হবেÑ এ আশায় আগেই ৯২ জন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বিটিসিএল নিয়ন্ত্রকারী কর্তৃপক্ষ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের (পিটিডি)। তবে এমন অগ্রিম নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধান পরিপন্থি বলে অভিমত জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞদের। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যমান কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে বিশেষ সুবিধায় দেওয়া হচ্ছে পদোন্নতি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিটিসিএলের অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ‘সহকারী ব্যবস্থাপক (কারিগরি)’ পদে এই মুহূর্তে শূন্য পদের সংখ্যা ৬৭। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি এই পদে ৯২ জনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিটিসিএল। অর্থাৎ, ২৫ জনকে বেশি নিয়োগ দেওয়া হবে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ‘সহকারী ব্যবস্থাপক’ থেকে ‘ব্যবস্থাপক’ পদে পদোন্নতির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। ২৫ জন সহকারী ব্যবস্থাপক এই পদোন্নতি পেলেই সহকারী ব্যবস্থাপকের ২৫ পদ শূন্য হবে। অভিযোগ উঠেছে, ২৫ জনের মধ্যে অনেককেই বিশেষ সুবিধায় দেওয়া হবে পদোন্নতি। এ জন্য পদ খালি হওয়ার আগেই এবং পদোন্নতি পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত না হলেও অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। তবে এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত ২৫ পদে নিয়োগে পদোন্নতির বিষয়টিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বিভাগের সচিব ও বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুন নাসের খানের সঙ্গে গত বুধবার যোগাযোগ করা হলে হোয়াটস অ্যাপে লিখিত প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। প্রশ্নের উত্তরে উপসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ২৫ কর্মকর্তার পদোন্নতি হলে পদ শূন্য হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে থাকে, তাই আগেই লোকবল নিয়োগের উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ২৫ জন কর্মকর্তার সবাই পদোন্নতি পাবেন এমন নিশ্চয়তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিটিসিএলের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

এদিকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিটিসিএলের পুরোনো উপাত্ত দিচ্ছে ভিন্ন চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির অতীতের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতির জন্য এর আগে দুবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবারই প্রায় অর্ধেক কর্মকর্তা অকৃতকার্য হয়েছেন। ২০১৬ সালের ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে পদোন্নতি পরীক্ষায় মাত্র ১৭ জন কর্মকর্তা কৃতকার্য হয়েছিলেন। অকৃতকার্য হয়েছিলেন দ্বিগুণ কর্মকর্তা, অর্থাৎ ৩৪ জন। ২০১৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ২৭ জন কৃতকার্য হলেও অকৃতকার্য হয়েছিলেন পাঁচজন।

বিটিসিএলের কর্মকর্তারা পরিচয় গোপনের শর্তে জানান, পদোন্নতির আসন্ন পরীক্ষায়ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তা যদি কৃতকার্য না হন এবং সহকারী ব্যবস্থাপক পদে যদি অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়, তাহলে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের পদায়ন নিয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে। অনেক কর্মকর্তা আবার পদোন্নতির পরীক্ষাকে ‘লোকদেখানো’ এবং ‘নতুন যোগসাজশ’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। তাদের আশঙ্কা, পদোন্নতি পরীক্ষার নামে শুধু আনুষ্ঠানিকতা হবে। নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের পাস করিয়ে দেওয়ার জন্যই আগে থেকে পদের সংখ্যা গণনা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

বিটিসিএলে পূর্বের এক পদোন্নতি প্রক্রিয়া নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত চলছে। ডিপ্লোমা পাস টেকনিশিয়ানদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঘুষের বিনিময়ে সহজ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং অর্থের বিনিময়ে পদোন্নতির অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তদন্তে গত ৩ আগস্ট তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে, ঠিক সে সময় এ ধরনের একটি অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা ও ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা নষ্ট করে দিচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বিটিসিএল কি ভবিষ্যৎ জানতে পারে, নাকি দুর্নীতির তদন্তকে পাশ কাটিয়ে নতুন কোনো অনিয়মের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে?

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদের সঙ্গে গত বুধবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে জেনে পরবর্তীতে জানাবেন বলে প্রতিবেদককে বলেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা রওনক তাহমিনার (মহাব্যবস্থাপক) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। রওনক তাহমিনার সঙ্গে যোগাযোগ করে লিখিত প্রশ্ন পাঠালেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে ভবিষ্যতে পদ শূন্য হবেÑ এ আশায় অগ্রিম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ, লেখক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে পদ শূন্য হবেÑ এই আশায় এখনই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা নিয়োগ দেওয়া বেআইনি এবং সংবিধান পরিপন্থি। কারণ সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের সমান সুযোগ লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আজ যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে, তখন হয়তো একজনের আবেদনের যোগ্যতা নাই। কিন্তু ভবিষ্যতে পদ শূন্য হলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে হয়তো তার আবেদনের যোগ্যতা থাকত। অর্থাৎ, আজকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে ওই ব্যক্তিকে তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে। ফলে বিষয়টি বেআইনি। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এমন কিছু মামলার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে, যেখানে এমন অগ্রিম নিয়োগ প্রক্রিয়া বা নিয়োগকে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!