ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এখনো হয়নি ব্যাংক হিসাব তলব বা জব্দ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বিগত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী-এমপি-ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ রয়েছে ১০ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। দেশে জব্দ হয়েছে ৪৬ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। কিন্তু খোদ দুদকের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিএফআইইউ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর। কিন্তু এরপরও তার ব্যাংক হিসাব তলব কিংবা জব্দের আদেশ দেয়নি বিএফআইইউ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, তার ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য মহলের ইশারায় তার হিসাবে এখনো হাত পড়েনি বিএফআইইউর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিএফআইইউর তদন্তের আওতায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও রয়েছে এস আলম গ্রুপ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবারের আরামিট গ্রুপ, বিতর্কিত নাবিল গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাসা, সিকদার, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন ও জেমকন গ্রুপ। বিদেশি কয়েকটি সংস্থা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটি এ পর্যন্ত তদন্তসংশ্লিষ্ট এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৫৭৩টি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা ও ৩০ লাখ ডলার জব্দ করেছে। আর ১৮৮টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) হিসাবের বিপরীতে জব্দ করা হয় ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিএফআইইউ নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য অর্থ জব্দ করতে পারে। যে কারণে পরে তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের মাধ্যমে আবার এসব অর্থ ও শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়। এর বাইরে আরও অনেক অর্থ জব্দ হয়েছে।

বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে জব্দ করা ৫৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি ১৩ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশে রয়েছে ৬ হাজার ৯৭ কোটি টাকা এবং দেশে ৭ হাজার ৭৭৫ কোটি। এ ছাড়া জব্দ করা ৪৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা অস্থাবর সম্পত্তি। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে দেশে রয়েছে ৩৯ হাজার ৩১ কোটি টাকার সমপরিমাণ সম্পদ। আর বিদেশে ৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার সম্পত্তি। বিদেশে জব্দ হওয়া অর্থের মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ১৫ কোটি পাউন্ড এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার ৯ কোটি পাউন্ডও অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সম্প্রতি এ অর্থ জব্দ করেছে।

দুদক সংশ্লিষ্টদের দাবি, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকা দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হোক। তিনি অবৈধভাবে অর্থ অর্জন করে সেই অর্থ কী করেছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি পাচার করেও থাকেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।