মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম

দলগুলোর কোর্টে বল ঠেলে দিল সরকার

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম

দলগুলোর কোর্টে বল  ঠেলে দিল সরকার

রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এই আহ্বানের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, সরকার এভাবে সময় বেঁধে দিতে পারে না। সরকারের উচিত কালক্ষেপণ না করে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন জোরালো করা।

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ‘জরুরি সভায়’ এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলগুলোর মধ্যে দরকার রাজনৈতিক সচেতনতা ও আলোচনার সংস্কৃতি, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। তবে রাজনৈতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতার কারণে সময় নষ্ট হলে ‘সরকার সিদ্ধান্ত নেবে’ বক্তব্য রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

তবে গণভোট কবে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবেÑ গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে। এসব সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে গতকাল জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার এভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে সময় বেঁধে দিতে পারে না। আর বিএনপি তো সরকারের কাছে দলীয় অবস্থান জানিয়েই দিয়েছে। তার পরও সরকারের আহ্বানের বিষয়ে বিএনপি দলীয় ফোরামে আলোচনা করছে, কী করা যায়।

তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থান, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নে জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত মনে করছে বিএনপি। একই সঙ্গে সনদের বিষয়ে জনগণের রায়ও স্পষ্ট হবে।

সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণভোট অপ্রয়োজনীয়। আর এই জুলাই সনদের আদেশে কে স্বাক্ষর করবে? কেউ বলছে সরকারপ্রধান। তার তো সেই অথরিটিই নাই। আর গণভোটের কোনো অপশনই তো সংবিধানে নেই। তাই এসব বিষয়ে কালক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করা এই সরকারের জন্য জরুরি কাজ। তবে নির্বাচিত সরকার চাইলে গণভোট করতে পারবে। তখন তারা সিদ্ধন্ত নেবেÑ কী সংস্কার করবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জুলাই জাতীয় সনদ, সংবিধান সংস্কার চূড়ান্ত করা এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় লক্ষ করা হয়, দীর্ঘদিন আলোচনার পরেও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। এ ছাড়া গণভোট কবে ও তার বিষয়বস্তু কী হবেÑ এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

আসিফ নজরুল বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, কবে অনুষ্ঠিত হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমত প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবেÑ এগুলোসহ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে, সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত সহজ হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। সেটি সভায় বিবেচনায় রাখা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, কবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি হতে পারে? জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একটু সময় দিতে চাই। যে বিষয়টি উল্লেখ করলাম, আমরা একটু দেখি।’

রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তারা যদি আলোচনায় ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার কী করবে, কী সিদ্ধান্ত নেবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কোনো আলটিমেটাম দিইনি, আহ্বান জানিয়েছি। আমরা অপেক্ষা করব। তারপর সরকার সরকারের মতো পদক্ষেপ নেবে।’

সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আলোচনার আয়োজন করে দেবে কি নাÑ এমন প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার বহু আলোচনা করেছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছরে আলোচনা করে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা নিজেরা আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবেÑ এ প্রত্যাশা সরকার করছে।’

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষে অভিযোগ করা হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশনে যে বিষয়গুলো আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল, বাস্তবায়ন সুপারিশে এসে সেই আলাপ-আলোচনার বিষয়গুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে বা সম্পূর্ণভাবে সেগুলো রক্ষা করা হয়নি। এর জবাবে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবেÑ এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারেন, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!