ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন করবেন বগুড়া-৬ আসনে। এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘যেসব আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, সেগুলো পরে ঘোষণা করা হবে। এর বাইরে কিছু আসন শরিকদের জন্য ছাড়া হবে। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনে ঘোষিত আসনগুলোতেও পরিবর্তন আনা হতে পারে। কারণ এটি প্রাথমিক তালিকা।’
প্রার্থী ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, নজরুল ইসলাম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মির্জা আব্বাস, হাফিজ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা কে কোন আসনে লড়বেন: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও ভোলা-৩ আসনে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদী-২ ড. আব্দুল মঈন খান, নেত্রকোনা-৪ লুৎফুজ্জামান বাবর, সিরাজগঞ্জ-২ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা-২ আমান উল্লাহ আমান, কুমিল্লা-১ ড. মোশাররফ হোসেন, কক্সবাজার-১ থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-৪ ফজলুর রহমান, ময়মনসিংহ-১ এমরান সালেহ প্রিন্স, নোয়াখালী-১ এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-৩ বরকত উল্লাহ বুলু, লক্ষ্মীপুর-৩ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চাঁদপুর-১ এহসানুল হক মিলন, ঢাকা-১৬ আসনে আমিনুল হক ও চট্টগ্রাম-৭ থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ ছাড়া ঢাকা-১২ আসনে সাইফুল ইসলাম নিরব, ঢাকা-৬ থেকে ইসরাক হোসেন, ঢাকা-১৪ থেকে সানজিদা ইসলাম তুলি, ঢাকা-১৯ থেকে সালাহ উদ্দিন, কক্সবাজার-৪ আসনে শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১ থেকে নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-১৩ সরওয়ার জামাল নিজাম, ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ, টাঙ্গাইল-৮ আহমেদ আজম খান মনোনয়ন পেয়েছেন।
২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য যারা আছেন তালিকায়: বিএনপির সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লা-১ আসনে, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদী-২ আসনে আবদুল মঈন খান, চট্টগ্রাম-১০ আসনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কক্সবাজার-১ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভোলা-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও দিনাজপুর-৬ আসনে এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদের যারা মনোনয়ন পেলেন: পটুয়াখালী-১ আসনে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নোয়াখালী-৩ আসনে বরকত উল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ আসনে মোহাম্মদ শাহজাহান, ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরী, কুমিল্লা-৩ আসনে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, টাঙ্গাইল-৮ আসনে আহমেদ আজম খান মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ ছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদের মধ্যে কুমিল্লা-৬ আসনে মনিরুল হক চৌধুরী, ঢাকা-২ আসনে আমান উল্লাহ আমান, নোয়াখালী-১ আসনে মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-৪ আসনে জয়নুল আবদিন ফারুক, বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৫ আসনে মজিবুর রহমান সারোয়ার, নেত্রকোনা-৪ আসনে লুৎফুজ্জামান বাবর, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তাজভীর উল ইসলাম, পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিব, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৪ আসনে মুশফিকুর রহমান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মঈনুল ইসলাম খান মনোনয়ন পেয়েছেন।
এ ছাড়া প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন সিলেট-১ আসনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে তাহমিনা রশদীর লুনা, সিলেট-৩ আসনে মোহাম্মদ আবদুল মালিক, সিলেট-৬ আসনে এনামুল হক চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আবুল খায়ের ভুঁইয়া, টাঙ্গাইল-২ আসনে আবদুস সালাম পিন্টু, ফেনী-২ আসনে জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ফজলুর রহমান এবং মৌলভীবাজার-৩ আসনে নাসের রহমান।
মনোনয়ন পাওয়া যুগ্ম মহাসচিবরা: নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবির খোকন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ময়মনসিংহ-১ আসনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স রয়েছেন।
এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেনÑ লালমনিরহাট ৩ আসনে আসাদুল হাবিব দুলু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনর রশিদ, রাজশাহী-২ আসনে মিজানুর রহমান মিনু, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, খুলনা-২ আসনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৫ আসনে আলী আজগর লবী, পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে ড. ওসমান ফারুক, মুন্সীগঞ্জ-২ মিজানুর রহমান সিনহা, ঢাকা-৬ আসনে ইশরাক হোসেন, নরসিংদী-১ খায়রুল কবির খোকন, চাঁদপুর-১ এহসানুল হক মিলন ও চট্টগ্রাম-৭ হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
মনোনয়ন তালিকায় নেই যেসব নেতার নাম: গতকাল ঘোষিত বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমানের নাম। একইভাবে নেই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল, সদ্য মনোনীত যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবীরের নামও। এ ছাড়া তালিকায় নেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুর রশীদ ইয়াসিনের নাম। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপনও নেই প্রার্থী তালিকায়।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনায় ছিলেন একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্য রুমিন ফারহানার নাম। তবে মনোনয়ন তালিকায় এবার তার নাম দেখা যায়নি। ঢাকা-১০ আসন থেকে বিগত সময়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম। এই আসনে একবার প্রার্থী হয়েছিলেন আরেক নেতা রবিউল ইসলাম রবি। তাদের দুইজনের নামও নেই ঘোষিত তালিকায়। মাগুরার একটি আসন থেকে এবার দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন আলোচিত নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। তবে তিনিও বাদ পড়েছেন এই তালিকা থেকে।
৬৩ আসন ফাঁকা, শরিকদের অপেক্ষায় রাখল বিএনপি
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে কাদের কত আসন দেওয়া হবে, তা ঘোষণা না করলেও ৬৩ আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি জোট শরিকদের জন্য ২২টি আসন রেখেছিল।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যারা, যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যে সমস্ত আসনে তারা আগ্রহী, সে সমস্ত আসনে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি। আমরা আশা করছি, তারা তাদের নাম ঘোষণা করবেন, তখন আমরা চূড়ান্ত করব। এটা হচ্ছে আমাদের সম্ভাব্য তালিকা, এখানে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক দলগুলো আছেন, তাদের সাথে আলোচনা করে আমরা কোনো কোনো আসনে পরিবর্তন আনতে পারি।’
২০১৮ সালের নির্বাচনে জোট শরিকদের মধ্যে গণফোরামকে সাতটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে চারটি, জেএসডিকে চারটি, এলডিপিকে চারটি, খেলাফত মজলিসকে দুটি এবং কল্যাণ পার্টিকে একটি আসন ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগের আমলে ওই নির্বাচনের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছিলেন কারাগারে। গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। প্রশ্নবিদ্ধ সেই ভোটে বিএনপি পাঁচটি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাতটি আসন পেয়েছিল।
২০১৮ সালে যাদের আসন ছেড়েছিল বিএনপি
গণফোরামের নেতাদের মধ্যে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আমসা আমিন, পাবনা-১ আসনে অধ্যাপক আবু সাইদ, ময়মনসিংহ-৮ এ এইচ এম খালেকুজ্জামান, ঢাকা-৬ সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৭ মোস্তফা মহসীন মন্টু, মৌলভীবাজার-২ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, হবিগঞ্জ-১ আসনে রেজা কিবরিয়াকে মনোনয়ন দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মধ্যে নাটোর-১ আসনে মনজুরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৪ আসনে লিয়াকত আলী, টাঙ্গাইল ৮ কুড়ি সিদ্দিকী, গাজীপুর-৩ ইকবাল সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
জেএসডি নেতাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৮ আসন শহীদ উদ্দীন মাহমুদ, কুমিল্লা-৪ আসন আবদুল মালেক রতন এবং লক্ষ্মীপুর ৪ আসন আ স ম আব্দুর রবকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি।
এ ছাড়া এলডিপির সৈয়দ মাহমুদ মোরশেদের জন্য ময়মনসিংহ-১০, রেদওয়ান আহমেদের জন্য কুমিল্লা-৭, শাহাদাত হোসেন সেলিমের জন্য লক্ষ্মীপুর-১, নূরুল আলমের জন্য চট্টগ্রাম ৭ আসন বিএনপি ছেড়ে দিয়েছিল।
খেলাফত মজলিশের নেতাদের মধ্যে হবিগঞ্জ-২ আব্দুল বাসিত আজাদ, হবিগঞ্জ-৪ আহমদ আবদুল কাদের এবং কল্যাণ পার্টির জন্য চট্টগ্রাম-৫ আসনে সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি।
        
                            
                                    
                                                                
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
                                    
                                    
                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                            
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন