একীভূত পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের কর্মকৌশল আর আর্থিক সমন্বয় কী পদ্ধতিতে হবে, তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানতে চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রতিবছর রাজস্ব সংগ্রহের যে লক্ষ্য দেওয়া হয় তা বাস্তবতার সংঙ্গে মিল না থাকার কারণ। অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক রেজল্যুশন প্রক্রিয়া কী পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হবে তার কৌশল জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিস্তারিত কর্মকৌশল তৈরির কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। আর পাঁচ ব্যাংকে সরকার টাকা দিলে ব্যাংকগুলো তা কীভাবে ম্যানেজ করবে। এই টাকা সরকার কোন খাত থেকে দেবে। এবং ব্যাংকগুলো টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি প্রয়োগ করবে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এই বিষয়েও সরাসরি কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। তবে বলা হয়েছে, সরকার কোনো অর্থ ব্যয় করলে তা বাজেটের ভেতরেই থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোন খাত থেকে অর্থ দেওয়া হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা হাতে পেলে ঠিক করা হবে।
দেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান অস্থিরতা ও দীর্ঘদিনের অনিয়মে জর্জরিত পাঁচটি ইসলামিক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে নতুন একটি সরকারি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন একটি ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে অনুমোদনের পথে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রক্রিয়ার একটি বিস্তারিত পথনকশা তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ধাপে ধাপে একীভূতকরণ সম্পন্ন হবে। যেকোনো দিন এই ব্যাংকে প্রশাসন নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংকেই স্ব-স্ব বোর্ড দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই সরকারি ব্যাংক গঠনের মাধ্যমে বহুদিন ধরে আর্থিক সংকটে থাকা পাঁচটি বেসরকারি ইসলামিক ব্যাংকের দায়, সম্পদ ও জনবল একত্রিত করে একটি নতুন কাঠামো দাঁড় করানো হবে। রাজধানীর মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে স্থাপন করা হবে একটি বিশেষ প্রকল্প কার্যালয়, যেখান থেকেই পুরো একীভূত প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে।
পথনকশা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে এবং পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে একীভূতকরণ শুরু হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়েছে, সেগুলো হলোÑ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সপোর্ট ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক।
এই পাঁচটির মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। দুই গোষ্ঠীই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আমানতকারীদের কাছ থেকে তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যার বড় অংশ এখন আর উদ্ধার সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ, দায় ও মানবসম্পদ একত্রিত করে নতুন ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা হবে। এর মূলধনের বড় অংশ অর্থায়ন করবে সরকার, ফলে এটি একটি সরকারি নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে। পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব এবং আর্থিক বিশেষজ্ঞরা।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ করবে। প্রশাসক হবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক বা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা, যিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্বও পালন করবেন। প্রশাসক নিয়োগের পর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করা হবে।
প্রশাসক দল ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা যৌথভাবে পাঁচ ব্যাংকের আমানত, ঋণ, তথ্যপ্রযুক্তি ও মানবসম্পদ বিভাগ একীভূত করবেন। পরে নতুন প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক এসব সম্পদ ও দায়ভার অধিগ্রহণ করবে। একীভূতকরণ শুরু হলে ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোর পুরোনো নাম ও সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে নতুন নাম ব্যবহৃত হবে।
পাঁচ ইসলামিক ব্যাংকে বর্তমানে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন ‘ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ফান্ড’ বা আমানত বিমা তহবিল থেকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা শেয়ার আকারে রূপান্তর করা হবে। বাকি সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে শেয়াররূপে রূপান্তরিত করে মূলধন পূরণ করা হবে।
এনবিআর সংস্কার সংক্রান্ত আইএসএফের বৈঠকে সংস্থাটি জানতে চেয়েছে সরকার প্রতি অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব সংগ্রহের যে লক্ষ্য দেয়, তা বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকে না। তারপরও সরকার এনবিআরকে এ ধরনের বাস্তবতাবিবর্জিত লক্ষ্য দেয় কেন। যেখানে এনবিআরের প্রতি অর্থবছর লক্ষ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ঘাটতি থেকে যায়।
এই বিষয়ে অর্থ বিভাগ ব্যাখ্যায় বলেছে, আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করার জন্য বাড়তি লক্ষ্য দেওয়া হয়। যাতে এনবিআর তার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।
        
                            
                                    
                                                                
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
                                    
                                    
                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                            
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন