ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচনি আলোচনায় রেজা কিবরিয়া-স্নিগ্ধ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
  • রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ এবং মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর দলটিতে যোগদান করে আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়ার সন্তান রেজা কিবরিয়া ও জুলাই শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। তারা দুজনই আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছে দলটির একটি সূত্র। এর মধ্যে গণফোরাম ও গণঅধিকার পরিষদের সাবেক নেতা রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসনে এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধ ঢাকা-১৮ আসনে লড়তে পারেন। বিএনপি ২৩৭ আসনে সম্প্রতি বিএনপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও এই দুই আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

গত মঙ্গলবার রাতে মীর মাহবুবুর রহমান ¯িœগ্ধ রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইচ্ছাতেই দলটিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। স্নিগ্ধ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদানের পেছনে আমার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত বিএনপির দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। তা ছাড়া বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন এবং রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা ২০২৩-এর অনেক জায়গা আছে, যেগুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে আমি আগ্রহী। দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি, সব পরিসরে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। তাই আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি। এতে করে জুলাইয়ের ঐক্য শক্তিশালী এবং দীর্ঘায়িত হবে বলে আমি মনে করি।’

স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেন, ‘ বিএনপির সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাচ্ছেন যে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করি, যা আমারও অন্যতম রাজনৈতিক আকাক্সক্ষার একটি। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দল এবং তরুণদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারব বলে আমি মনে করি। তবে সর্বোপরি আমি সব রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশ ও জুলাইপন্থি সবার সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিএনপি থেকে কোনো সিগন্যাল পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে গতকাল স্নিগ্ধ বলেন, ‘আমি এখন একটি দলের কর্মী। দল থেকে আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমি সেভাবেই কাজ করব।’

এদিকে তার হঠাৎ বিএনপিতে যোগদানে কিছু স্থানীয় নেতা ও বাসিন্দা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উত্তরার স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, বিএনপিতে যোগ দিয়ে মীর স্নিগ্ধ ক্ষমতার রাজনীতির পেছনে ছুটছেন। জুলাই শহিদের ভাই হওয়ায় ভোটের রাজনীতিতে তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুরাগের দলিপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ‘জুলাই শহিদের ভাই হিসেবেই মীর স্নিগ্ধকে আমরা চিনি। ঢাকা-১৮ আসনে ভোটের মাঠে বিএনপির জেলখাটা ত্যাগী নেতাদের জনপ্রিয়তাই বেশি। এই আসন থেকে বিএনপি স্নিগ্ধকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যয়ন করা হবে।’

অন্যদিকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যেই বিএনপিতে যোগদান করেছি এবং প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করব।’

হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।’

রেজা কিবরিয়া এর আগে গণফোরামে সাধারণ সম্পাদক এবং গণঅধিকার পরিষদে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

রেজা কিবরিয়া বিএনপিতে যোগদান করার পর তার নির্বাচনি এলাকা হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল ও নবীগঞ্জ) উপজেলায় শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ড. রেজা কিবরিয়া ও বিএনপির সাবেক এমপি শেখ সুজাত। দুজনের মধ্যে কে পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন। এ নিয়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে বিস্ময় ও কৌতূহল বিরাজ করছে।

এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সুজাত এবার বিএনপির মনোনয়ন পাবেন, এমনটা প্রত্যাশা ছিল তার কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের। তবে হঠাৎ রেজা কিবরিয়ার বিএনপিতে যোগদান ও নির্বাচনি ঘোষণায় বদলে যাচ্ছে সমীকরণ। শেখ সুজাতের কর্মীরা বলছেন, শেখ সুজাত বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ। তিনি ন্যায়পরায়ণ ও এলাকার উন্নয়ন প্রশ্নে বেশ আন্তরিক। সর্ববিষয় বিবেচনা করে শেখ সুজাত বিএনপির মনোনয়ন পাবেন।

এদিকে রেজা কিবরিয়ার সমর্থকদের ধারণা, রেজা কিবরিয়া ধানের শীষে মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হবেন এবং তার বাবার আদর্শ ধারণ করে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াবেন নিশ্চয়ই।