ধর্মকে ব্যবহার করে একটি চক্র ভেদাভেদ সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একটি পক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বানচালের চেষ্টা করছে। একাত্তরের ত্যাগের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একাত্তরে লাখ লাখ মানুষের ত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের মানুষ যেমন ২৪-কে ভুলতে পারবে না, তেমনি ৭১-কেও ভোলা যাবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে একটি চক্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে একাত্মতা করছে। যারা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে হত্যা করেছিল তাদের সঙ্গে এ দেশের মানুষ আপস করতে পারে না।’ মহাসচিব বলেন, ‘কিছুসংখ্যক দল আছে নির্বাচন চায় না। অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করছে, কারণ তারা নির্বাচিত হতে পারবে না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। কিছু দল বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। ভোট আমাদের করতে হবে। নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে।’ জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা বলে পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। পিআর আমরাও বুঝি না, বেশির ভাগ মানুষ এটার সঙ্গে পরিচিত না। ভোট দেবেন দলকে ব্যক্তিকে নয়, আমরা মানতে রাজি হইনি; কারণ পিআর জনগণ বোঝে না।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে রুহিয়া থানাকে উপজেলা ঘোষণার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মন্দিরের উন্নয়ন করব আমরা। এ ছাড়া ফ্যামিলি কার্ড, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। সে জন্য ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে উন্নয়ন সম্ভব।’ এ সময় নিজের শেষ নির্বাচন বলে ধানের শীষ মার্কায় ভোট চান তিনি।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের প্রয়াত বাবা মির্জা রুহুল আমিনের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তার বাবাকে নিয়ে ‘গুজব ও মিথ্যাচার’ করা হচ্ছে। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল আশা করেন, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ ছেলে-মেয়েরা করবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি গত দুই দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে আছি। কিছু কথা বলা এখন খুব জরুরি, আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ও তরুণ প্রজন্মের জন্য। জীবনের এই প্রান্তে এসে যখন দেখি, সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১-এর মার্চের ২৭ তারিখে আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়! আমার বাবা ঠাকুরগাঁও ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে।
অর্থাভাবে তার মা তার গয়না বিক্রি করে দেন- উল্লেখ করে স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যোগ দিই অর্থনীতি শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে। আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১-এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে আমার বাবার নামে কোথাও কোনো মামলা হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক এর শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎমানুষ জানে আমার বাবার কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সব নামকরা রাজনীতিবিদ। ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যুতে সরকারিভাবে শোক প্রকাশ করা হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার বাবা সম্বন্ধে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে এবং দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের জুলাই আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছেন। মিথ্যা, গুজব ও অপবাদ সমাজ ধ্বংস করে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার সারা জীবন এ দেশ আর জাতির জন্য দিয়েছি। গত বছর জুলাইয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে। আমি আশা করব, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলে-মেয়েরা করবে না। এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর পলিসি দিয়ে। শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে পপুলিজম কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না। আসুন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস আর দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ সৎ ও মানবিক বাংলাদেশ।

