‘চোর’ আখ্যা দেওয়া আন-অফিসিয়াল স্মার্টফোন বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীদের সাথে অবশেষে সভা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। টেলিযোগাযোগ খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল হকের নেতৃত্বে বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি দল ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক এই সভা আয়োজিত হয়। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে এই ব্যবসায়ীদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে স্মার্টফোন তথা মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে বিটিআরসি। ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর নামক এই ব্যবস্থায় দেশে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্মার্টফোন আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করতে চায় সংস্থাটি। তবে প্রায় দুই দশক ধরে এ খাতে গড়ে ওঠা প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী কমিউনিটির ব্যাবসায়িক ঝুঁকি আমলে নেয়নি বিটিআরসি। এই ব্যবসায়ীদের সাথে কোনো আলোচনা না করে এনইআইআর বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান তাদের ‘চোর’ বলে আখ্যায়িত করেন।
গত ২৯ অক্টোবর এনইআইআর বাস্তবায়নের তারিখ জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিটিআরসি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে স্মার্টফোন বাজারজাতকারী ব্যবসায়ীদের সাথে তখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আলোচনা কেন করা হয়নি; এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও ‘চোরে’র সাথে আলোচনা করে কখনো আইন হয় না। এই কারণে ওই ব্যবসায়ীদের আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে। আপনারা (গণমাধ্যম) চাইলে তাদের ওকালতি করতে পারেন’।
তবে চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের ঠিক ১০ দিন পরই ওই ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে আনুষ্ঠানিক সভা করে বিটিআরসি। গতকাল সোমবার মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি শীর্ষক ব্যবসায়ীদের ওই সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগ। বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল হকের নেতৃত্বে পরিচালক নূরন্নবী, উপপরিচালক মেহফুজ বিন খালেদ ও আহসানুল হাবীব মিথুনসহ অন্য কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সভাপতি ও গ্যাজেট অরবিটের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সুমাসটেকের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ পিয়াস, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মোল্লা টেলিকমের স্বত্বাধিকারী শামীম মোল্লা এবং মোতালেব প্লাজা শাখার সহ-সভাপতি ও অনিক টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ পিন্টুসহ অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এই সভায় অংশ নেন। এর আগে গত রোববার ই-মেইলের মাধ্যমে সংগঠনকে সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয় স্পেকট্রাম বিভাগের পক্ষ থেকে।
উভয়পক্ষের এই সভায় কী আলোচনা হয়েছে এবং ‘চোর’দের সাথে অবশেষে কেন সভা করা হলো, সে বিষয়ে জানতে রূপালী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান এবং স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে সোমবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যোগাযোগের কারণ উল্লেখ করে চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী এবং মহাপরিচালক (স্পেকট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল হককে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র পরিচয় গোপন রাখার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে জানান, প্রায় ১ ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় ধরে চলে আনুষ্ঠানিক সভায়। সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি জানানো হয়। ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমরা মূলত পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছি। এর মধ্যে আছে এক. সকল মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীই প্রযোজ্য শুল্ক পরিশোধ করে মোবাইল ফোন আমদানি করতে পারবেন এবং উৎপাদনকারী ব্র্যান্ড লিখিতভাবে অঙ্গীকার দেবে যে, ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন আমদানিতে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।
দুই. স্মার্টফোন আমদানির পর ‘বিল অব এন্ট্রি’ বিটিআরসিকে জমা দিলে আমদানিকৃত স্মার্টফোনের ‘আইএমইআই’ নম্বর ‘সাদা’ তালিকাভুক্ত করবে। এই দুই ক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেটের অনুমতির প্রয়োজন হবে না; এমন দাবি বিটিআরসিকে করেছি। এ ছাড়াও মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের খুচরা বিক্রয় (কোনো এক্সক্লুসিভ শপ) ব্যবসায়ে নিজেরা প্রবেশ করবে না এবং খুচরা বিক্রেতাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয় এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না; অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে গত কয়েক বছরে সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা বিঘিœত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কোনো হ্যান্ডসেট ব্ল্যাকলিস্ট করার ক্ষেত্রে এক বছরের সময়সীমা (গ্রেস পিরিয়ড) দেওয়া এবং মোবাইল ফোন উৎপাদকদের বৈষম্যমূলক দর নির্ধারণে পরিবর্তন করারও দাবি জানিয়েছি।

