দশম গ্রেডে বেতনসহ ৩ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে দুই দিন কর্মবিরতি পালনের পর আজ মঙ্গলবার থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরছেন শিক্ষকরা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় বসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবু তাহের মো. মাসুদ রানাসহ দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং আন্দোলনরত শিক্ষকদের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবি দশম গ্রেড হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের জন্য ১১তম বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাদের প্রতি আস্থা রেখে আমরা আজ মঙ্গলবার থেকে আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক তিন দফা দাবি নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের কথা জানিয়েছেন। এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, সভায় সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেল উন্নীত করার বিষয়ে অর্থসচিব বলেছেন, বেতন গ্রেড ১১তে উন্নীত করার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি অর্থ বিভাগ জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ এ প্রেরণ করেছে। যা জাতীয় বেতন কমিশনের বিবেচনাধীন রয়েছে। জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পরে অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
শিক্ষকদের ১০ এবং ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থ সচিব বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এর আগে গত রোববার সারা দেশে কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে আশানুরূপ সমাধান না আসলেও প্রথমে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকরা। তবে গভীর রাতে ফের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
এই ঘোষণার পর গতকাল দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ফলে দেশের প্রায় সব বিদ্যালয়ে বন্ধ ছিল পাঠদান কার্যক্রম। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সফল করার জন্য পাঠদান তেকে বিরত রয়েছি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, ‘ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কোটালীপাড়ায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। তবে তারা বিদ্যালয়েই আছেন।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ময়নুর রহমান মিলন জানান, প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গাইবান্ধায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তারা পুনরায় ক্লাসে ফিরবেন।
এর আগে তিন দফা দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যেতে শুরু করেন। ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি প- হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর ওই দিন রাতেই শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দেশজুড়ে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তারা।

