জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বা হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮ দলের নেতারা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০২৬ সালে নির্বাচন দেখতে হলে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাইয়ের পক্ষে থাকবে না, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আগে গণভোট দিতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজি থাকলেও তার আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানান এই নেতা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ৮ দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত আমির এসব কথা বলেন। সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ আট দলের নেতারা আসন্ন নির্বাচন, গণভোট এবং জুলাই সনদ ঘিরে নানা হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা লড়াই করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি। লড়াই করে দাবিও আদায় করব। জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের ভাষা না বুঝলে পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, তবে আমাদের দাবি আদায় হিমালয়ের মতো অনড় থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে পরাজিত শক্তি’র দেশে কোনো স্থান নেই এবং গণভোট ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদল ৭২-এর বাকশালপন্থি, অন্য দল ২৪-এর জুলাইপন্থি। ২৪-এর পরাজিত শক্তিরা ১৩ নভেম্বর যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বাকশালপন্থিদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে জুলাইপন্থিরা। গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না। জুলাই সনদকে আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’ তার মতে, যারা নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না, তারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনতে চায়।
ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি প্রদান এবং এ বিষয়ে গণভোট আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠিন কর্মসূচির মুখোমুখি হতে হবে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যারা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের দাবি জানাচ্ছে, তারা ‘ক্ষমতাপ্রেমী’ এবং তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘জুলাই সনদের স্বীকৃতিসহ এই বাংলাদেশকে সুন্দর একটা দেশ তৈরি করার লক্ষ্যে যে জুলাই সনদ তৈরি হয়েছে, এই সনদের আইনি ভিত্তি জাতীয় নির্বাচনের আগেইÑ এটা আমরা চাই এবং দিতে হবে। যখন জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পাবে, তখন জাতীয় নির্বাচনেরও আইনি ভিত্তি তৈরি হবে। অন্যথায় নির্বাচনটি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে থাকলেও, শুধু বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে, যা জনগণের কাছে তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছে।’
সমাবেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে পাঁচ দফা গণদাবির আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক সংস্কারসমূহের আইনি ভিত্তি কেবলমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যথায় জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদানসহ পাঁচ দফা গণদাবিই আজকের এই জনসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য।’
এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ ৮ দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এদিন বেলা ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে উপস্থাপনা করেন ৮ দলের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও আন্দোলনরত ৮ দলের সমন্বয়ক আযাদ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আগে গণভোট না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়।’
নির্বাচনের আগে গণভোটসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ৭ নভেম্বর এই দলগুলো প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়ায় তারা গতকাল সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দলগুলোর প্রধান দাবিগুলো হলোÑ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন করা, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন করা, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী দলগুলো হলোÑ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

