ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মাক্স পরা অবস্থায় ৩ যুবক এসে পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক মো. জুলহাস মিয়া আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও দুজন।
নিহত জুলহাস উপজেলার কৈয়ারচালা গ্রামের বাসিন্দা মো. সাজু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বাস চালিয়ে আসছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় একই দিন সন্ধ্যায় ফুলবাড়িয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এসপি জানান, ঘটনার সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এ বাসটিতে যাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশা (২০) এবং তার মা মোছা. শারমিন সুলতানা রুমকি (৪৫) অবস্থান করছিলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা ভোরে বাড়ি ফেরার আশায় বাসের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মাক্স পরা অবস্থায় ৩ যুবক এসে পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি টের পেয়ে বাসের গ্লাস ভেঙে শাহিদ ইসলাম বাদশা এবং তার মা মোছা. শারমিন সুলতানা রুমকি বেরিয়ে আসেন। এ সময় পড়ে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত যাত্রী রুমকিকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এ সময় ঘুমিয়ে থাকা চালক মো. জুলহাস মিয়া বাসের ভেতরে আটকা পড়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সেখানেই মারা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, প্রাথমিকভাবে এমনই ধারণা করা হচ্ছে জানিয়ে এসপি বলেন, ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুত এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়রা আরও জানান, হঠাৎ দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ফুলবাড়িয়া ফায়ার স্টেশনের অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর ইয়াসিন ইকবাল বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় বাসে তল্লাশি চালিয়ে সিটে পড়ে থাকা অগ্নিদগ্ধ একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বাসটির যাত্রী শাহিদ ইসলাম বাদশার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তাদের বাড়ি উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামে। তবে সঠিক পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
নিহত বাসচালক জুলহাসের মা বলেন, আমার ছেলে তো কোনো রাজনীতি করে না, তাহলে কী কারণে তাকে পুড়িয়ে মারা হলো। আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তার তিন লাখ টাকা দেনা আছে। সে মাসে ১৫ হাজার টাকার কিস্তি চালায়। ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি আনুমানিক এক-দেড় বছর আগে। কোনো সন্তান না হওয়ার আগেই আমার ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
স্ত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, সংসারে কোনো ফুল ফোটার আগেই স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।
বোন ময়না বেগম বলেন, আমার ভাই সেই ছোটবেলা থেকে বাস চালায়। সে সপ্তাহে একবার করে বাড়িতে আসত। আবার চলে যেত। আসার ভাই বাসেই বসবাস করত। তার উপার্জনের টাকাতেই আমরা চলতাম। এখন আমরা কীভাবে চলব, কে আমাদের দেখবে। আমাদের দাবি, সরকার যেন পরিবারের দায়িত্ব নেয়। সরকার দায়িত্ব না নিলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রুকনুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান চলমান।

