বাংলাদেশে আমেরিকান লাগেজ ব্র্যান্ড স্যামসোনাইটের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিয়ে জটিলতা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে মুনমুন লেদার হাউস প্রাইভেট লিমিটেড স্যামসোনাইটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করলেও, সাম্প্রতিক তদন্তে তাদের কার্যক্রমে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। আনুষ্ঠানিক চুক্তি বাতিলের পরও মুনমুন লেদার হাউস এখনো ‘স্যামসোনাইট’ নাম ব্যবহার করে ব্যবসা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ পথে পণ্য আমদানির অভিযোগও উঠেছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ‘স্যামসোনাইট’ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের তাদের ডিলারশিপ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই জানায়নি।
জানা যায়, ১৯৯৯ সাল থেকে মুনমুন লেদার হাউস ‘স্যামসোনাইট বাংলাদেশ’ নামে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পরিচালনা করছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়। এরপর ২০২৪ সালের ২৬ জুন নতুন চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্যামসোনাইট কর্তৃপক্ষ ‘ঊধংঃ ঋতঈঙ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে নতুন ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে অনুমোদন দেয়, যারা বর্তমানে ‘ব্যাগ অ্যান্ড প্যাক লিমিটেড’-এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। তবে পুরোনো ডিস্ট্রিবিউটর মুনমুন লেদার হাউস এখনো ‘স্যামসোনাইট’ নাম ব্যবহার করে ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গুদামে পুরোনো ব্যাগ, মিশ্র লোগো ও ভ্যাট অনিয়ম
চলতি মাসের ৪ তারিখ ভোক্তা অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শক দল বিভিন্ন অভিযোগে মুনমুন লেদার হাউসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তদন্তকারী দলের এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাসুর কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের ফারুক ক্যাসেল মালিকানাধীন গুদামের আটতলায় ২৫৭টি ট্রলি ব্যাগ ও ১৫টি ব্যাগের কার্টন মজুত ছিল। এসবের মধ্যে বেশকিছু ব্যাগে স্যামসোনাইটের লোগো থাকলেও বাকিগুলোয় অন্য ব্র্যান্ড যেমন আমেরিকান ট্যুরিস্টার ইত্যাদির স্টিকার লাগানো। তিনি জানান, ব্যবসার অনুমোদন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটি স্টককৃত পণ্য বিক্রি করে আসছে। সেখানে কোনো বৈধ ভ্যাট ও ট্যাক্স রসিদও পাওয়া যায়নি। এদিকে মুনমুন লেদার হাউস সম্প্রতি এফএনআইপিএস এলএলসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্যামসোনাইটের পণ্য আমদানি করছে বলে তথ্য পেয়েছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম) অফিস। ইতোমধ্যে মুনমুন লেদার হাউসের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি। একজন কর বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেই প্রতিষ্ঠানের নামে বিক্রয় চালিয়ে যাওয়া আইনি অপরাধের শামিল। তা ছাড়া ভ্যাট-ট্যাক্সসংক্রান্ত নথিতে অনিয়ম থাকলে তা রাজস্ব ফাঁকির শামিল।’
উত্তর দেয়নি স্যামসোনাইট কর্তৃপক্ষ
এ বিষয়ে জানতে রূপালী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্যামসোনাইটের ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্য অফিসে একাধিকবার ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর দেয়নি। রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত স্যামসোনাইটের শোরুমের শাখা ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ গত সোমবার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই মুহূর্তে কারা স্যামসোনাইটের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে আমার জানা নাই। তবে গত সপ্তাহে শাখাটিতে ক্রেতা পরিচয়ে জানতে চাইলে এক বিক্রয়কর্মী জানান, স্যামসোনাইটের বাংলাদেশে ডিস্ট্রিবিউটর এখন ‘ব্যাগ অ্যান্ড প্যাক লিমিটেড’।
কর ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্যামসোনাইটের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সুনাম রক্ষায় বাংলাদেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছ ব্যাবসায়িক নীতিমালা প্রয়োগ জরুরি।

