ভূমিকম্পের প্রবল ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হুড়োহুড়ি করে বিভিন্ন ভবন থেকে নামতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন অন্তত কয়েকশ মানুষ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার তৈরি পোশাক কারখানা থেকে তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেক শ্রমিক। গাজীপুর, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় এসব ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী ও জেলার শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে কারখানা থেকে বের হতে গিয়ে দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের বেশির ভাগকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার টঙ্গীর বিসিক এলাকার ফ্যাশন পালস লিমিটেড এবং শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখ- গ্রামের ডেনিম্যাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও টঙ্গীর ফ্যাশন পালস লিমিটেডে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। ভূমিকম্প শুরু হলে ৯তলা ভবনের প্রায় সব শ্রমিক একসঙ্গে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে কারখানার ভেতরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এ সময় জরুরি নিরাপত্তা গেট বন্ধ থাকায় পদদলিত হয়ে অনেকে আহত হন। পরে আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইসরাত জাহান এনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পর থেকেই পোশাক কারখানার কয়েকশ শ্রমিক চিকিৎসা নিতে আসেন। এখনো অনেকে আসছেন। একজন শ্রমিকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
অন্যদিকে, শ্রীপুরের ডেনিম্যাক কারখানার সাততলা ভবনে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ভূমিকম্পের সময় ভবন কাঁপতে শুরু করলে শ্রমিকেরা একসঙ্গে নিচে নামতে গিয়ে অনেকে সিঁড়িতে পড়ে যান এবং অনেকে সিঁড়ি ও দেয়ালে ধাক্কা লেগে আহত হন। এ সময় কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
কারখানার শ্রমিক মনির হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ভূমিকম্প হওয়ায় সবাই হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করেন। কিন্তু প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। শ্রমিকেরা ফটক ভাঙার চেষ্টা করলে হঠাৎ ফটক ভেঙে পড়ে, তখন নিচে থাকা শ্রমিকেরা তাতে চাপা পড়ে আহত হন।’
এ ছাড়া মাগুরায় ভূমিকম্পের আতঙ্কে শ্রীপুর উপজেলার আমতৈল গ্রামে অবস্থিত স্টাইলস্মিথ স্যান অ্যাপারেলস লিমিটেড গার্মেন্টসে শতাধিক নারী-পুরুষ কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভূমিকম্প অনুভূত হলে হঠাৎ কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় কর্মরত শ্রমিকরা দ্রুত প্রাণরক্ষার্থে নিচে নেমে রাস্তায় জমায়েত হন। প্রথমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও কাজে ফিরে যাওয়ার পর ভয় ও আতঙ্কে অনেক শ্রমিকের মাথা ঘোরা, বমি ও অসুস্থতা দেখা দেয়। তাদের দ্রুত শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। অসুস্থদের মধ্যে গুরুতর ২০ জনকে ভর্তি করা হয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুস সাকিব জানান, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ‘ম্যাস হিস্টিরিয়া’র মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে কারো শরীরে বড় ধরনের আঘাত নেই।
গার্মেন্টসের প্রশাসনিক প্রধান মো. আমান উল্লাহ জানান, যখন ভূমিকম্প অনুভূত হয়, তখন কর্মীরা বাইরে চলে আসে। পরে তারা কাজে যোগদান করে। কিন্তু এর কিছু সময় পর আতঙ্কের কারণে অনেকে অসুস্থ পড়লে তাদের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ভূমিকম্পের সময় একটি পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে আহত হয়ে অন্তত ৮০ জন শ্রমিক দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত আটজন সে সময় প্রতিষ্ঠানেই অচেতন হয়ে পড়েন।
গতকাল ভূমিকম্পে কুমিল্লায় ব্র্যান্ডিক্স নামের একটি পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ইপিজেডের বেপজা হাসপাতালে ৫০ জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দৌড়ে বের হতে গিয়ে পাঁচজন বেশি আহত হন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও ওই প্রতিষ্ঠানের একটি ইউনিটে উৎপাদনের কাজ চলছিল। ভূমিকম্পের সময় প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত নারী শ্রমিকেরা দৌড়ে বের হতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। এ ছাড়া কয়েকজন ভয়ে অচেতন হয়ে প্রতিষ্ঠানের মেঝেতে পড়ে যান। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে বেপজা ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কুমিল্লা ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভূমিকম্পের সময় ওই কারখানার নারী শ্রমিকেরা ভয়ে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। তবে কেউ গুরুতর আহত হননি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সবাই বাড়ি চলে গেছেন।
এদিকে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে হল থেকে নিচে নামতে গিয়ে ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হলের দুই শিক্ষার্থী ও দক্ষিণ হলের একজন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর জানা যায়।
আহতরা হলেন ঢাকা কলেজ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হলের ২০২ নাম্বার কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান হাবিব ও রাকিবুল হাসান রাজ। অন্যজন দক্ষিণ হলের ১১৬ নাম্বার কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন