প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছেন রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর আব্দুল গণি রোডের শিক্ষা ভবনের সামনের সংযোগ সড়ক থেকে সচিবালয় অভিমুখী সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১টার দিকে সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় হাইকোর্ট মোড় থেকে সচিবালয় অভিমুখি সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে পুলিশ। এতে হাইকোর্ট মোড় থেকে সচিবালয় অভিমুখে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রস্তাবিত বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষে-বিপক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও নিজ নিজ দাবি আদায়ে তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের মধ্যেই এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
গতকাল মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সরকারি কর্মচারী হিসেবে শিক্ষকরা পেশাদারিত্ব বজায় রাখবেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও নিজের অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি শিক্ষার্থীদের শীতকালীন ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে এ-সংক্রান্ত বেশকিছু সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে গত রোববার দুপুর থেকে শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি জানানোর পর রাতে তারা সড়ক ছেড়ে দেন। গতকাল দুপুরে তারা ফের সড়কে অবস্থান নেন।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ২৪-২৫ ব্যাচের ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘অধ্যাদেশ জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরু হয়ে এক বছর পার হয়ে গেছে। সেখানে আমরা সেশনজটের মুখে। আমরা দ্রুত অধ্যাদেশ চাই।’
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজকে নিয়ে এই ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে ইউনিভার্সিটির কাঠামো নিয়ে কলেজগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে ইউনিভার্সিটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনের মধ্যে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতির কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসবের মধ্যে রয়েছেÑ ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত খসড়া পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করার কাজ চলমান; আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিমার্জিত খসড়ার ওপর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা সম্ভব হবে; আসন্ন শীতকালীন ছুটি শেষে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পাঠদানের জন্য একটি অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদন করা হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। খসড়ায় সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে ‘ইন্টারডিসিপ্লিনারি’ বা ‘স্কুলিং’ কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবনা অনুযায়ী কলেজগুলো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদানও চালু থাকবে। তবে ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত কাঠামোতে সাতটি কলেজসহ সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতির মতো মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ হওয়ার শঙ্কায় আছেন। তারা কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ‘অধিভুক্তিমূলক কাঠামোতে’ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। আর কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাংশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইনি কাঠামো দ্রুত নিশ্চিত করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্রুততম সময়ে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানাচ্ছেন। অপরদিকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতোই প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করে স্কুলিং কাঠামো বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন